সেরা পঞ্চাশটি গল্পের পাত্র-পাত্রীরা বিভিন্ন শ্রেণি, বর্গ ও পেশার মানুষ যারা আমাদের বিস্তত্ব গ্রামাঞ্চল এবং মফস্বল শহরের বাসিন্দা প্রধানত। আছে কলকাতা মহানগরের গল্পও। তবে সংখ্যায় তারা খুবই কম। যেমন, মহাবৃক্ষের আড়াল, দিনকাল, মনশুক, আয়ুষ্কাম, আমরা তোমাকে পুরস্কার দেব, বাস্ এই কটিই। লেখকের সৌভাগ্যক্রমে প্রায় সারাটা জীবন জুড়ে তাকে এমন পরিবেশ এবং পরিস্থিতিতে কাটাতে হয়েছে, এমন সব মানুষের সংসর্গে পুষ্ট হয়েছে তার বোধবুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা, গত শতকের পঞ্চাশের দশকের পরের বাংলাভাষার কথাকারদের মধ্যে এমন জীবনচর্চা প্রায় নেই বললেই চলে।
এসব কথা বললে হয়তো মনে হতে পারে অভিজিতের গল্পে শুধু বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যই আছে। না, একথা ঠিক নয়, এই সেরা পঞ্চাশটি গল্পে পাঠক অবশ্যই উপলব্ধি করবেন তাঁর রচনাভঙ্গির অসাধারণ নৈপুণ্যও। বিদগ্ধ সমালোচক বলেছেন, ‘অভিজিতের গল্প সহজে ফুরোয় না, গণ্ডির বাইরে নিয়ে যায় আমাদের, একটা রেশ থেকে যায় শেষের পরেও। (মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়)। মৎসর, গ্লানি, রহমতের ফেরেশতা, মিন্নয়েল, দেহাত্মতত্ত্ব, মনশুক, চিলানিমায়ের গল্প, হিমবতী ইত্যাদি ধ্রুপদি ঢঙের ছোটো গল্পগুলোতে এই লক্ষণ বিদ্যমান। এই সংকলনে দীর্ঘ গল্পও আছে বেশ কয়েকটি। যেমন, ফাল্গুনি রাতের পালা, সুবর্ণ জলপাত্র, মানবদেহের গৌরব, সাংসদ গণপতি মিশ্র ইত্যাদি। আছে উপন্যাসোপম কয়েকটি দীর্ঘ গল্প, যেমন আনোয়ারা খুন হয়েছে, ক্ষেত্রপাল ও বালা লখিন্দর। যে সব গল্প পড়েই হয়তো অধ্যাপক অমিয় দেব বিস্মিত প্রশ্ন তুলেছেন ‘কী যাদু আছে অভিজিৎ সেনে যে তিনি এমন টেনে রাখতে পারেন’ ‘যার বিস্ময়বোধ আর তেমন অবশিষ্ট নেই, অগ্নিমান্দ্যদোষে না ভুগলেও আস্বাদন কিঞ্চিৎ উদ্দ্গারপ্রবণ’ তেমন পাঠককেও? সমালোচক সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, পরিস্থিতির বৈচিত্র উদ্ভাবনে, চরিত্র পরিকল্পনায়-বিশেষ করে নারী চরিত্রের একেবারে স্বতন্ত্র সংকট উদঘাটনে লেখকের সিদ্ধি প্রথম শ্রেণীর। ‘একসঙ্গে এতগুলো গল্প পড়তে পড়তে মনে হয়েছে’, লিখেছেন অধ্যাপক উজ্জ্বলকুমার মজুমদার। ‘এই গল্পকারের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা এতদিন পর্যন্ত অন্য কোনো কথাশিল্পীর লেখায় পাইনি। তাছাড়া একসঙ্গে এত বৈচিত্র্যের সমন্বয়? বোধহয় না। বিশ্বখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় চিঠিতে লিখেছেন, ‘… অধিকাংশ সময় লেখার মধ্যে এমন গভীর অভিজ্ঞতার সন্ধান পাই না, যা তিন বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা সতীনাথ কি ছোটগল্পের রবীন্দ্রনাথে পাই। আপনার লেখায় সেই দুর্লভ দৃষ্টির সন্ধান পেলাম যা মানবজীবনের সত্য উন্মোচনের জন্য মাঠে নেমেছে। একজন মহান শিল্পী সোমনাথ হোর লিখেছেন, ‘কিন্তু মহৎ সৃষ্টি হচ্ছে কই! আসলে একটা মরমী জীবনবোধই উত্তরণের সহায় মনে হয়। আমি সাহিত্যিক নই। পড়বার পর কিছু মনেও থাকে না। তাই যা কিছু বললাম-তবে জোর বিশ্বাস আছে আপনি পারবেন-তেমন উপহার নবপ্রজন্মকে দিতে’।
অভিজিৎ সেনের সেরা পঞ্চাশটি গল্পে পাঠক এইসব বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিস্মিত উপলব্ধির স্বতঃপ্রণোদিত প্রতিক্রিয়ার স্ফুরণ অনুভব করতে পারেন।
Reviews
There are no reviews yet.