কবিতাকে বারবার ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবার এক ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন শ্রীজাত। কাব্যভাবনাকে প্রতিনিয়ত ঠেলে দিয়েছেন ঝুঁকির মুখে, প্রকাশভঙ্গিকে অনর্গল পেতে রেখেছেন জুয়ার টেবিলে। তাঁর এই নতুন কাব্যগ্রন্থও সেরকমই কিছু কবিতার সমাহার, যেখানে শ্রীজাত নিশ্চিন্ততার বলয়ের অনেকখানি বাইরে গিয়ে বলতে চেয়েছেন নতুন কথা, নতুন ভাবে। অস্বস্তিকে আড়ালে রাখতে না-চেয়ে, ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন কবিতার সংক্রমণে। ‘আপেল কাটার ছুরি’ ও ‘স্থানীয় করাতকল’— দু’ধরনের কবিতাস্রোতের এই সংকলনে একদিকে যেমন ভেসে উঠেছে অলীক বিষাদ ও স্মৃতিপ্রবণতার কাটাকুটি, তেমনই অপরদিকে জেগে থেকেছে চোরা হিংসা ও জাদুবাস্তবতার এক অলৌকিক দিগন্ত। এ-সমস্ত কবিতারা যেমন ভাবনায় আনকোরা, তেমনই দৃশ্যকল্পের ব্যবহারে অনন্য। যাদের প্রতিটি বাঁকে লুকিয়ে আছে অনাবিষ্কৃতের বিস্ময় আর অপ্রত্যাশিতের ঝলক। সব মিলিয়ে এক নতুন ভাষা ও ভাবনার মিশেল, বাংলা কবিতায় যা পূর্বসূরিহীন। নিজের কাব্যসীমাকে বহুদূর প্রসারিত করেই এইসব কবিতার কাছে পৌঁছেছেন শ্রীজাত, যা তাঁর কবিসত্তাকেই পুনরাবিষ্কারের শিরোপা দেবে। বাংলা কবিতার পাঠকের কাছে এই গ্রন্থ তাই অনাস্বাদিতপূর্ব ও অনিবার্য। যার প্রতিটি লেখা সাক্ষ্য দেবে নতুন এক উন্মোচনের এবং নতুন শ্রীজাত’র।
শ্রীজাত’র জন্ম ২১ ডিসেম্বর ১৯৭৫, কলকাতায়। বাবা, প্রয়াত তপন বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সাংবাদিক। মা, শ্রীলা বন্দ্যোপাধ্যায় উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী। দাদামশায় সংগীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তী।
প্রথম কাব্যপুস্তিকা ‘শেষ চিঠি’, ১৯৯৯ সালে। তখনই পদবি বর্জন। ২০০৪-এ ‘উড়ন্ত সব জোকার’ কাব্যগ্রন্থের জন্য পান আনন্দ পুরস্কার এবং কৃত্তিবাস পুরস্কার। ২০১৪-এ ‘কর্কটক্রান্তির দেশ’ কাব্যগ্রন্থের জন্য বাংলা আকাদেমি সম্মান ও ২০২০-তে পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমি’র সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্মাননা।
সম্প্রতি লিখছেন উপন্যাসও। গান এবং চিত্রনাট্যও লিখছেন নিরন্তর। বাংলা কবিতার প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছেন দেশ-বিদেশের বহু ক্ষেত্রে। ২০০৬-এ আমেরিকার আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক লেখক শিবিরে, ২০০৮-এ এডিনবরা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলায়, ২০১৭-এ ওয়েলস-এর ‘হে ফেস্টিভ্যাল’-এ।
বিয়ে ২০০৪ সালে, দূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে, অধ্যাপনার পর যিনি বর্তমানে শিশু-সুরক্ষা ও সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত।
নেশা কালো কফি, গানবাজনা শোনা, পৃথিবীর নানা শহর ও জাদুঘর দেখে বেড়ানো। স্বপ্ন দেখেন সিনেমা তৈরির। ভালবাসেন ভাবতে ও আলসেমি করতে।
Reviews
There are no reviews yet.