Description
এর কাহিনী শুরু হয়েছে কলকাতা থেকে কিছু দূরের একটা গ্রামে। সেখানে ২২-২৩ বছরের যুবক সোমেন এসেছে তার পিতা ব্রজগোপালের কাছে। ব্রজগোপাল কলকাতায় ছেলেদেরকে ছেড়ে গ্রামে এসে থাকেন বহেরু নামের এক গেরস্ত চাষার কাছে। স্ত্রী-ছেলে-মেয়েদের সাথে ব্রজগোপালের সম্পর্ক ভালো নয়। সম্পর্ক ভালো না হওয়ার কারণ তেমন গুরুতর কিছু নয়। কিছুটা ব্যক্তিত্বের সংঘাত, কিছুটা বা ব্রজগোপালের ‘বাতিল’ চিন্তাধারা। তিনি কলকাতায় থাকতে চান না, চাকুরী করা পছন্দ করেন না। তিনি চান ছেলেরা গ্রামে চলে এসে চাষাবাদ করুক। ছেলে-মেয়েরা পিতাকে জানে সংসারের প্রতি উদাসীন, দায়িত্বহীন হিসাবে। তার প্রতি তাদের কোন মায়া মমতাও নেই।
কলকাতায় ভাড়া বাড়ীতে থাকে ব্রজগোপালের স্ত্রী ননীবালা, বড় ছেলে রনেন ও তার পরিবার এবং ছোট ছেলে সোমেন। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তাদেরও বাপের প্রতি কোন টান নেই। বৃদ্ধ বাপ দূর গ্রামে একজন অনাত্মীয়ের কাছে একা পড়ে থাকেন।
ব্রজগোপাল একটা নোটবুকে ডায়েরীর মত লিখেছেন। সোমেন সেটা পড়ে দেখে। এক পাতায় তিনি লিখে রেখেছেন, ‘ভগবান, উহারা যেন ভালো থাকে।’ এই লেখাটা পড়ে সোমেনের মনে হলো, পিতা তাদেরকে যে ভালোবাসে না – এ কথা সম্ভবত: ঠিক নয়।
বড় ছেলে রনেন ফুড ইন্সপেক্টরের চাকুরী করে। অঢেল উপরি আয়। সংসার সেই চালায়। ফলে তার স্ত্রীর সাথে ননীবালার খুটখাট লেগেই থাকে। তবে তিনি ছেলেদেরকে খুব বেশী ভালোবাসেন। ঠিক তেমনি অপছন্দ করেন স্বামীকে।
এর মধ্যে বড় জামাই একটা জমির খোজ আনে। ননীবালা চান জমিটা কিনে ছেলেরা সেখানে বাড়ী করুক। সে জন্য তিনি স্বামীর ইন্সুরেন্সের টাকাটা নিতে চান। সবাই ভাবে ব্রজগোপাল তার সারা জীবনের সঞ্চয়টা দিবেন না। এই টাকা নেয়ার জন্যই ছেলেরা ব্রজগোপালের কাছে মাঝে মাঝে যায়। ব্রজগোপাল নিজেও আসেন কলকাতায় ছেলেদের বাড়ীতে। নিতান্ত অপরিচিত মানুষের মত বাইরের ঘরে বসে দুই একটা কথা বলেই বিদায় নেন।
সোমেন বিএ পাশ করে আর পড়াশোনায় উৎসাহ পায় না। বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিয়ে বেড়ায়। চাকুরীর চেষ্টা করে কিন্তু হয় না। পৃথিবীর প্রতি তার বিতৃষ্ণা বাড়তে থাকে। সে পছন্দ করতো তার এক সহপাঠীকে, তারও বিয়ে হয়ে যায়।
হঠাৎ রনেনের পাগলামী দেখা দেয়। সে ছোট বাচ্চার মত বাবা বাবা করে। সোমেন মায়ের প্রতি খুব রুক্ষ আচরণ শুরু করে। তার ধারণা মায়ের কারেনই বাবাকে এই বুড়ো বয়সে দূরে গ্রামে পড়ে থাকতে হচ্ছে। বাবার ভালোবাসা সে উপলব্ধি করতে থাকে। একদিন গ্রামে এসে বাবার সাথে দেখা করে যাবার সময়:
– যাচ্ছি। বলে একটু ইত:স্তত করে বলে – আমাকে কোন দরকার হলে –
ব্রজগোপাল অন্ধকারে একটু অবাক গলায় বললেন – দরকার ! সে তেমন কিছু নয়।
সোমের প্রত্যাশা নিয়ে দাড়িয়ে থাকে।
ব্রজগোপাল মাথা নেড়ে লাজুক গলায় বললেন – তুমি ভেবো না। দরকারটা বাপ ছাড়া কেউ বোঝে না।
-কী দরকার বাবা?
-তোমার গায়ের গন্ধটা আমার দরকার ছিল। আর কিছু নয়।
এর মধ্যে অন্যদের অনেক ঘটনাও আছে। বহেরুর জীবন। ব্রজগোপালের বড় মেয়ে লীলার বাচ্চা হয় না। তার সাথে সুভদ্র নামে এক সহকর্মীর সম্পর্ক নিয়ে তার স্বামী অজিতের সন্দেহ। অবশেষে তাদের বাচ্চা হয়।
সোমেনের পরিচয় হয় তার মায়ের স্কুল জীবনের বান্ধবীর মেয়ে রাখিয়ার সাথে। তারা অনেক ধনী। সোমেন তাকে পছন্দ করে। কিন্তু সামাজিক পার্থক্যের কারণে পছন্দটা গোপন রাখে। রাখিয়া এমন কিছু বলে তাতে মনে হয় সেও হয়তো তাকে পছন্দ করে।
এর মধ্যে ব্রজগোপাল তার ইন্সুরেন্সের পুরো টাকাটা স্ত্রীকে দিয়ে দেন জমি কিনে বাড়ী করার জন্য। জমি কেনা হয়। বাড়ীর কাজও শুরু করা হয়।
ননীবালার সাথে রনেনের স্ত্রীর দূরত্ব পাড়তে থাকে। এক দিন ব্রজগোপাল যখন তাদের বাসায় আসলেন তখন বাসায় কেউ ছিল না। ননীবালা হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি স্বামীর সাথে গ্রামে চলে যাবেন।
ব্রজগোপাল অসংসারী মানুষ। কিন্তু গ্রামে এসে ননীবালা দেখলেন এই ভবঘুরে মানুষটিকে আশ-পাশের গ্রামের লোকেরা ব্রাম্মন হিসাবে খুব শ্রদ্ধা করে, গুরু হিসাবে দেখে। তিনি গ্রামে বেশ কিছু জমি কিনেছিলেন। বহেরু তাতে নিজের খরচে পাকা বাড়ী তুলে দিল। তার ভক্তরা তাকে কেউ কাঠ, কেউ রড়, কেউ বালু দিয়ে গেলো। সব সময় ভক্তরা আসে, নানা উপহার দিয়ে যায়, পায়ের কাছে বসে তার কথা শুনতে চায়। কলকাতার বাড়ীতে নিতান্ত অপাংতেয় ব্রজগোপাল এখানে পরম শ্রদ্ধার। নতুন বাড়ীতে ওঠা নিয়ে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করলো গ্রামের মানুষ। ব্রজগোপালের ছেলে, মেয়ে, নাতী, নাতনী সবাই আসলো সে অনুষ্ঠানে।
এর মধ্যে সোমেন সুন্দরবনের কাছের একটা গ্রামে চাকুরী নিয়ে চলে গেলো। গিয়ে কাউকে তার ঠিকানা জানালো না। বাবার মত অভিমানে সে নিরুদ্দেশ হয়ে থাকলো।
অবশেষে একদিন পত্রিকায় ‘সোমেন তুমি ফিরে এসো’ বিজ্ঞাপন দেখে সে কলকাতায় আসলো। এসে দেখে রিখিয়া তাকে চিঠি দিয়েছে। কয়েকদিন পর রিখিয়ার মা-বাবা বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন। তাদের বিয়ে হয়ে গেলো।
Aditi Sannigrahi –
Classic