ঈশানী রায়চৌধুরীর ‘আবছা অ্যালবাম’-এর দ্বিতীয় পর্ব।
বই মাত্রেই যে ভূমিকা থাকতেই হবে, তার কোনও মানে নেই। তবুও মনে হল, দু-চার কথা লিখি।
ঈশানীর স্মৃতিকথন ‘আবছা অ্যালবাম – ইস্টম্যানকালার’-এর পাণ্ডুলিপি দেখলাম। চোখে এখন দেখতে পাই না, তাই একজন পড়ে শোনাল। শুনে আমি অভিভূত।
ঈশানীর লেখার হাত এবং দেখার চোখ, দুই-ই অত্যন্ত চমৎকার। উত্তর কলকাতার একটি বনেদী বাড়িতে বড় হয়ে ওঠা, তার কলেজ-জীবন এবং যৌথ পরিবারের আবহ, এই সবকিছু ফুটে উঠেছে এই লেখায়। তার দাদুর স্নেহ এবং প্রশ্রয় তাকে যেভাবে ঘিরে ছিল বর্মের মতো এবং দাদুর মৃত্যু… সেই বর্ণনা দিয়ে এই বইয়ের শুরু। অনুপুঙ্খভাবে। তারপর এসেছে তার লেখাপড়ার জগৎ, বন্ধু-বান্ধবীদের কথা এবং নানা অধ্যাপকের শারীরিক ও চারিত্রিক গুণাবলী সম্বলিত সরস ও সসম্ভ্রম বর্ণনা। রক্ষণশীল সমাজের টুকরো ছবিও এসেছে। সরস বর্ণনার শেষে যখন ছেড়ে চলে যাওয়া পরিজনদের কথা আসে, মৃত মানুষদের প্রসঙ্গ; তখন এককালীন গমগমে যৌথ পরিবারের ক্রমক্ষীয়মাণ অবস্থার ছবি কোথায় যেন মনকে ব্যথাতুর করে তোলে।
ঈশানীর স্বামী কল্লোল ওর সহপাঠী ছিল। তার একঝলক বর্ণনাও অতি দক্ষতায় আঁকা।
পাণ্ডুলিপি পড়া শেষ হয়ে যাওয়ার পরে মনে হয়েছিল, এ লেখা আরও দীর্ঘ হল না কেন! তখনকার উত্তর কলকাতা, রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ, সেই ট্রাম বাস ফুটপাথের বর্ণনা আমাদের মতো অনেক পাঠককেই হঠাৎ করে পুরোনো দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এমন লেখা পড়ে মন ভারী স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে। ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধ, কিন্তু কোনও দেখানেপনা বা অতি-সপ্রতিভতা নেই। সেটা দেখেই মুগ্ধ হতে হয়।
আমি আশা করব, ঈশানী আরও লিখবে এবং ওর লেখা যেন না থামে। আমি অত্যন্ত দুঃখিত, নিজের হাতে ভূমিকাটি লিখতে পারলাম না আমার ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তির জন্য, শ্রুতিলিখন দিতে হল। এই গ্লানি একান্তই আমার। এই বইয়ের পাঠক-পাঠিকারা আশা করি নিজগুণে আমাকে মার্জনা করবেন।
বুদ্ধদেব গুহ
Reviews
There are no reviews yet.