দীর্ঘদিন হিমালয়ের খাঁজেভাঁজে বিচরণের সুবাদে এটুকু বুঝেছি যে, হিমালয় দর্শন কখনোই শেষ হয় না। শেষ হওয়ার কথাও নয়। এ এক অন্তহীন পরিক্রমা। কী করেই বা শেষ হবে! বিশাল হিমালয়ের প্রতিটি বাঁকেই যে নতুন নতুন দৃশ্যপট। নতুন নতুন হিমালয়।
আর, সমগ্র ভারতের উত্তর সীমানা জুড়ে, পশ্চিম থেকে পুব অবধি, হিমালয়ের কত-কত নাম! গাড়োয়াল-হিমালয়, কুমায়ুন-হিমালয়, নেপাল- হিমালয়, তরাই-হিমালয়,…। প্রত্যেকটির খাঁজেভাঁজে হাজার হাজার দৃশ্যপট। তাই, প্রত্যেকবারই হিমালয়কে আমার নতুন লাগে। প্রত্যেকবারই এক- একটি অচেনা হিমালয়। কাজেই, এক জীবনে সমগ্র হিমালয়কে চেনা-বোঝা তো দূরের কথা, ভালো করে দেখে ওঠাই দুষ্কর। কেবল তাকে অল্পস্বল্প ছুঁয়েই মনের সাধ মেটাতে হয়। তাই করে চলেছি।
আর, হিমালয়-দর্শন মানে তো কোনোমতেই তার কিছু বাছা বাছা শৈলশহর দেখা নয়। অন্তত আমার কাছে তো নয়ই। আমার প্রিয় শ্লোগানটি হল, তীর্থ নয়, তীর্থপথ। কাজেই, আমার ভ্রমণের বড় অংশ জুড়ে থাকে কেবল গন্তব্যস্থল নয়, গন্তব্যে পৌঁছবার পথটিও। পথকে আমি কিছুতেই মূল ভ্রমণের থেকে ছোটো করে দেখতে পারিনে। বিশাল ভারতবর্ষকে যে ঘটা করে দেখতে বেরোই আমরা, আমার মতে, সেই ভারতবর্ষের বারো আনাই পড়ে থাকে পথে।
এবারের সফর কুমায়ুন-হিমালয়। ওই হিমালয়ের পড়শি গাড়োয়াল-হিমালয়ে গিয়েছি একাধিকবার। কিন্তু তাও আমার কোনো সন্দেহ ছিল না, এই সফরেও এক অচেনা হিমালয়কেই দেখব। বাস্তবেও তাই ঘটলো। পরতে পরতে ছুঁয়ে দেখলাম একের পর এক অনেকগুলি নতুন অচেনা হিমালয়কে। শুরু হয়েছিল বেরিলি থেকে, শেষ হল নৈনিতালে। এর মধ্যে কত যে নতুন, অচেনা হিমালয়! দেখলাম টনকপুর, লোহাঘাট, মায়াবতী আশ্রম, পিথেরাগড়, আবট পাহাড়, গংগোলিহাট, পাতাল ভুবনেশ্বর, মুন্সিয়ারি চৌকরি, বাগেশ্বর, বৈজনাথ, কৌশানি, বিনসর, আলমোড়া, রাণীখেত, নৈনিতাল…। গোটা পরিক্রমায় হিমালয় আমাদের সঙ্গে সারাক্ষণ লুকোচুরি খেলল। কখনো নাগালের মধ্যে এসে বলে, এবারো ছোঁও আমায়, পরক্ষণেই দূরে চলে যায়।
Reviews
There are no reviews yet.