গবেষণার অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো, ইতিহাসের গবেষণা বা ইতিহাস নিয়ে বিশ্লেষণ এক জায়গায় থেমে থাকে না; ইতিহাসের মতোই, পরিবর্তন ইতিহাসচর্চারও ধর্ম। ইতিহাসের যিনি ছাত্র তাঁকে তাই তাঁর বিষয়বস্তুর মধ্যেই শুধু পরিবর্তনের উপাদান খুঁজে বেড়ালে চলে না, ইতিহাসচর্চার পালাবদলের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কেও অবহিত থাকতে হয়। না-থাকলে, ইতিহাস হয়ে পড়ে শিকড়হীন, শূন্যচারী; কৌতূহল মেটানোর, অবসর কাটানোর ভাবলম্বন মাত্র, বিশিষ্ট স্থান-কাল-চেতনার মধ্যে অবস্থিত ঐতিহাসিকের সজাগ উদ্যমের ফসল নয়। বাংলার ইতিহাস নিয়ে গবেষণার ইতিহাস, বহু মনীষীর বারবার আবৃত্ত আক্ষেপ সত্ত্বেও, নিতান্ত নবীন নয়। গবেষণার পদ্ধতি ও দৃষ্টিভঙ্গীতে, গবেষণার ধারাবাহিকতা সত্ত্বেও, উল্লেখযোগ্য পালাবদল ঘটেছে। এই ধারাবাহিকতার মধ্যে বাংলার ঐতিহাসিক হিসেবে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থান কোথায় তা নির্ণয় করা সহজ নয়-সহজ নয় এই কারণে যে ইতিহাসচর্চার ইতিহাস বিশেষজ্ঞ-মহলে আজও অপেক্ষাকৃত অনাদৃত। তবু সাধারণভাবে কয়েকটি কথা বোধহয় বলা যায়। রাখালদাসের ইতিহাস-গবেষণা যে-যুগের প্রতিনিধি, সে যুগেও, ভূগোলতত্ত্ববিদ Hugh Prince-এর ভাষায় ‘The great age of rediscovery’-র বৈশিষ্ট্য পূর্ণমাত্রায় উপস্থিত। এই কথার অর্থ এই নয় যে, ভারতবর্ষের ইতিহাসচর্চায় নতুন ‘আবিষ্কারে’র প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিকতা আজ লুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু রাখালদাস যে যুগের মধ্যে থেকে ইতিহাসের প্রকরণ আয়ত্ত করেছিলেন, সে যুগে ‘আবিষ্কারে’র সামগ্রিক তাৎপর্য ছিল অবশ্যই ভিন্ন। ইতিহাসের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে তখনও কঠোর শ্রেণীবিভাগ জন্মায়নি, ঐতিহাসিক তখনও তাঁর অনুসন্ধান-ক্ষেত্রের বিশিষ্টতার সর্বাংশে অনুগত নন।
‘The great age of rediscovery’-র বহুবিধ দুর্বলতা সে যুগের ইতিহাস-বিশ্লেষণে বর্তমান, কিন্তু সে দুর্বলতা কোন বিশেষ ঐতিহাসিকের ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়, দুর্বলতার সঠিক অনুসন্ধান করলে তবেই তার বোধ্য ব্যাখ্যা মেলার সম্ভাবনা।
Reviews
There are no reviews yet.