লেখক পরিচিতি
লালকেল্লায় যখন ভারতের জাতীয় পতাকা সগৌরবে ওড়ে, তখন অদ্ভুত এক আবেগ অনুভব করি আমরা, প্রায় সমস্ত ভারতবাসী। অথচ ভুলে যাই তাঁদের নাম, যাঁরা না থাকলে ওই পতাকা তৈরি হত না; তা উত্তোলনের সুযোগও হত না। সেই সব ভুলে যাওয়া নামের একটি হল হেমচন্দ্ৰ (দাস) কানুনগো—একজন অসাধারণ বিপ্লবী, আদ্যন্ত বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ, প্রতিভাবান চিত্রকর, সর্বোপরি সমঝোতা না করা এক লৌহ-কঠিন ব্যক্তিত্ব। ভারতের জাতীয় পতাকার অন্যতম প্রধান রূপকার ছিলেন তিনি।
হেমচন্দ্রের জন্ম ১৮৭১ সালে, মেদিনীপুরের রাধানগর গ্রামে। বাবার নাম ক্ষেত্রমোহন কানুনগো। মেদিনীপুর টাউন স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে এফ. এ. পড়তে মেদিনীপুর কলেজে ভর্তি হন তিনি। সেখানে হেমচন্দ্রের মন বসে না। পরিবারের সকলের অমতে ডাক্তারি পড়তে চলে আসেন ক্যাম্বেল মেডিক্যাল কলেজে। ছোটোবেলা থেকে ছবি আঁকতেন। সেই অনন্য শিল্পীসত্তা তাঁকে সারা জীবন তাড়া করে ফিরেছে। ফলে ডাক্তারি পড়া ছেড়ে ভর্তি হলেন সরকারি আর্ট স্কুলে। না, এবারেও পাঠ সমাপ্ত হল না। প্রতিভাবান ছাত্র হেমচন্দ্র একই সাথে মেদিনীপুর টাউন স্কুলে অঙ্কন শিক্ষক ও কলেজে রসায়ন বিভাগের ডেমনস্ট্রেটার হিসাবে যোগ দিলেন। একসময় চাকরি ছেড়ে শুধু ছবি এঁকে জীবনযাপন করবেন ঠিক করেছিলেন। সে চেষ্টাও সফল হয়নি। শেষে আবার মেদিনীপুর জেলা বোর্ডে চাকরি নেন। সময়টা তখন আক্ষরিক অর্থেই ঝোড়ো। হেমচন্দ্রের মনে শোভাবাজার রাজবাড়িতে দেখা ‘আনন্দমঠ’-এর স্মৃতি, রাজনারায়ণ বসুর গভীর প্রভাব। দেশের স্বাধীনতার জন্যে জীবন উৎসর্গ করবেন ঠিক করলেন।
১৯০২ সালে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসুর মাধ্যমে হেমচন্দ্রের পরিচয় হল অরবিন্দ ঘোষের সঙ্গে। তাঁর মনে হয়েছিল এই পরিচয় একটি সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে পারে। ফলে তাঁর মেদিনীপুরের অনুগামীরা যোগ দিলেন কলকাতার কর্মীদের সাথে। অরবিন্দের মনে তখন ইংরেজ হত্যার পরিকল্পনা। যদিও তার কোনও সুনির্দিষ্ট রূপ ছিল না, তবু তাৎক্ষণিক আবেগে হেমচন্দ্র এই প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হলেন। তিনি মেদিনীপুরে মামার বাড়িসংলগ্ন বাগানে নির্বাচিত কিছু তরুণকে অস্ত্র ব্যবহারের শিক্ষা দিতে লাগলেন। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন তখন তীব্রতর হচ্ছে এবং আন্দোলনকারীদের উপর চলছে বীভৎস অত্যাচার। ইতিমধ্যে বিবাহ করেছেন হেমচন্দ্র। তবু অত্যাচারীদের নিধনের অ্যাকশন স্কোয়াডে নাম লেখাতে দ্বিধা করেননি। আসলে হেমচন্দ্র ছিলেন এমন এক দৃঢ়চিত্ত মানুষ, যিনি সিদ্ধান্ত নিলে কখনও পিছিয়ে আসতেন না ।
Reviews
There are no reviews yet.