ব্রাহ্ম পরিবারে জন্মেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কৈশোরে তিনি যেমন দেখেছিলেন ব্রাহ্ম পরিমণ্ডলের বিস্তার, তেমনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন ব্রাহ্মসমাজের অনিবার্য ভাঙনের ছবিও। কখনও ব্রাহ্মসমাজের পত্রিকা-সম্পাদনার কাজে, কখনও হিন্দু-ব্রাহ্ম বিতর্কে তিনি সক্রিয় ছিলেন। প্রায় তিন দশক ছিলেন আদি ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক। ব্রহ্মসংগীতের জগতে এক আশ্চর্য শিখরকে স্পর্শ করতে পেরেছিল তাঁর গান। বহু বিচিত্র ব্রাহ্ম-অনুষঙ্গ ছড়িয়ে আছে তাঁর সৃষ্টির জগতে। তারপরেও তিনি জানিয়ে দিতে পেরেছিলেন: ‘আমার কথা ব্রাহ্মসমাজের কথা নয়, কোনও সম্প্রদায়ের কথা নয়।’ ব্রাহ্মরাও কি সব সময় দ্বিধাহীন প্রসন্নতায় গ্রহণ করতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে? তিনি নিজেই বলেছিলেন, ব্রাহ্মরা তাঁকে ‘বিশেষ অনুকূল দৃষ্টিতে কোনওদিন দেখেননি’। ব্রাহ্মধর্মকে হিন্দুধর্মের প্রকাশ বলে মনে করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। হিন্দুরাও কি তাঁকে গ্রহণ করতে পেরেছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত মনে? ‘সাধারণে আমায় অহিন্দু বলে অবজ্ঞা করেছে’, এ-আক্ষেপোক্তিও তো তাঁরই। সম্প্রদায়গত বাইরের ধর্মটা তাঁর কাছে ছিল ‘অভ্যাসের ধর্ম’। অভ্যাসের ধর্মকে অতিক্রম করে নিজের ‘অন্তর্নিহিত প্রাণধর্ম’-এর সন্ধান করে চলাই ছিল তাঁর আজীবনের ব্রত। ব্রাহ্মসমাজকে তিনি সাম্প্রদায়িকতার আবরণ ঘুচিয়ে দিয়ে মানব-ইতিহাসের বিরাট ক্ষেত্রে বৃহৎ করে উপলব্ধি করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ব্রাহ্মসমাজ তাঁর আহ্বানে সাড়া না-দেওয়ায়, তিনি নিজেই হাঁটতে শুরু করেছিলেন
সে-পথে। কৈশোরে অপৌত্তলিক ব্রাহ্মমতে উপনীত রবীন্দ্রনাথ জীবনের উপান্তে স্পর্শ করতে চেয়েছিলেন মন্ত্রহীনতার মাধুর্যকে। ‘ব্রাহ্ম’ থেকে হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন ‘ব্রাত্য’, ‘মন্ত্রহীন’। এ-বই সেই যাত্রাপথেরই আলোকগাথা।
সে-পথে। কৈশোরে অপৌত্তলিক ব্রাহ্মমতে উপনীত রবীন্দ্রনাথ জীবনের উপান্তে স্পর্শ করতে চেয়েছিলেন মন্ত্রহীনতার মাধুর্যকে। ‘ব্রাহ্ম’ থেকে হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন ‘ব্রাত্য’, ‘মন্ত্রহীন’। এ-বই সেই যাত্রাপথেরই আলোকগাথা।
Reviews
There are no reviews yet.