উৎসর্গে লেখক ভারতবর্ষের সমস্ত বিপ্লবের সব শহীদকে স্মরণ করেছেন। উপন্যাস যত এগোয় তিনি ততই যেন সুড়ঙ্গ খুঁড়ে গভীরে প্রবেশ করেন। একটি আগুনের ফুলকির মতই কৃষকের আন্দোলন কেমন করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বিপ্লবে পর্যবসিত হল, কেমন করে শীর্ষনেতৃত্বের মতান্তর বুঝিয়ে দিলো খতমের পথ কখনোই সঠিক নয়, কেমন করে গ্রাম-শহরের বিভাজন মেলবন্ধনে বাধা হল, সেসব তিনি যত্নের সঙ্গে লিখেছেন। অত্যন্ত মানবিকভাবে তিনি এর মধ্যে বুনে দিয়েছেন নবীন যৌবনের কী বিপুল অপচয় সেদিন ঘটেছিল। ধ্বংস নয়, সৃষ্টিই যে ঠিক পথ সেকথা প্রথম সারির বর্ষীয়ান নেতারা উচ্চাশার জোয়ারে ভেসে গিয়ে ভুলে গেলেন। পরবর্তীতে এঁদের অনেকেই বিপ্লব ছেড়ে নিশ্চিন্ত জীবনে থিতু হলেন। সুবিধাবাদ বা প্রাণের মায়া, যে নামেই ডাকা হোক, ঘটনা এমনই ঘটেছে। মাঝখান থেকে এক বিশাল সংখ্যক নবীন প্রাণ অপচয় হল। কোনো দিশা দেখাল না এই বিপ্লব। অন্তর্ঘাত, বিশ্বাসঘাত, আপনজনকে শত্রু চিহ্নিত করে প্রাণ নেওয়া, এসবই সেই বিপ্লবকে কোনো সত্যে উত্তীর্ণ হতে দিল না।
এত ডিসটোপিক উপন্যাস থেকে প্রাপ্তি কি? অবশ্যই প্রাপ্তি আছে। ভবিষ্যতে নির্ভীক, সত্যাচারী যৌবন যেন এভাবে আর নষ্ট না হয় সেই সাবধানবাণী লেখা হয়েছে এতে। এরপর যারা বিপ্লবের ব্লু-প্রিন্ট আঁকবেন তারা সতর্ক হবেন। এমন হঠাৎ জ্বলে ওঠা ফুলকি থেকে নয়, প্রকৃত যে আগুন আমাদের স্বস্তির উত্তাপ দেবে, শুধু জগতকে পুড়িয়ে খাক করবে না, সেটি তারা মনে রাখবেন। খুনে যে একটি উত্তেজক কীক আছে সেটি আমরা জানি। নয়ত এত থ্রিলার এত খুনের গল্প লেখা হত না। ভবিষ্যতের বিপ্লবের কারিগরেরা তাই এই কথাটি মনে রাখবেন আশা করি। মানুষের প্রাণ নেওয়া কোনো সস্তার কীক হতে পারে না। বিশেষত, যেখানে বিল্পব মানুষের মঙ্গলের জন্যই হয়।
Reviews
There are no reviews yet.