নিজের লেখালেখি সম্বন্ধে বলতে গিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর সময়ের প্রতিক্রিয়াকে চিহ্নিত করেছিলেন ‘ব্যাখ্যাহীন অস্থিরতা’ বলে। মন্তব্যটি তাৎপর্যপূর্ণ। এই ‘অস্থিরতা’কে শুধু কোনও যুবকের অস্থিরতা বললে ভুল হবে। আত্মপ্রকাশের অস্থিরতাও এ নয়। বলা যেতে পারে, এ হচ্ছে অভিজ্ঞান সন্ধানের যন্ত্রণা। ষাটের দশকে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যখন তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘যুবক যুবতীরা’ লিখছেন আপন খেয়ালে, কোথাও ছাপাবার তাগিদ ছাড়াই, তখন বাংলা উপন্যাসের নানা দিকবদল ঘটে গেছে নামকরা ঔপন্যাসিকদের হাতে। বিস্ময়ঘন রোমান্সের ছায়ালোকে নয়, অন্তর্মুখিতায়, আত্মনিমগ্নতায় এই সময়ের কথাকাহিনীর চরিত্রদের আমরা মুক্তি খুঁজতে দেখি। যুবক-যুবতীরা বেরিয়ে পড়েছে জীবনের মানে খুঁজতে। একেবারে নিজেদের মতো করে। অথচ জীবনের অন্বয় ভেঙে গেছে, শব্দ হারিয়ে ফেলেছে তার অভিধা। তবু তাদের আর্তিকে চিনতে পাঠকের ভুল হয়নি।
‘আত্মপ্রকাশ’-এ এসে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা উপন্যাসের সীমাহীন ভূগোলকে যেভাবে অতিক্রম করে যাত্রা শুরু করলেন, তা এক আশ্চর্য সিদ্ধি। সেই অভিযাত্রা এখনও থামেনি। তাই সর্বশেষ উপন্যাসে আজও সুনীল অনন্যদীপ্ত।
যথার্থ ঔপন্যাসিকের পটজ্ঞানে, চরিত্রচিত্রণের কারুতায়, বিদীর্ণ মানবপ্রতিমার নির্মাণে, সময় চেতনায়, মূল্যবোধে, বিচিত্র গল্প চয়নের কুশলতায়, সত্যের অনুসন্ধানে, জীবন জিজ্ঞাসার ব্যাকুলতায় সুনীলের যে-স্বাতন্ত্র্য ও উজ্জ্বল প্রকাশ, তা বাংলা কথাসাহিত্যের সম্পদ। তাঁর প্রথম উপন্যাস থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে লেখা উপন্যাসেও সুনীল সমান সজীব সমান প্রাণবন্ত। তাঁ গদ্যশৈলীতে কবি ও কথাকার সুনীলের অনুপম মেলবন্ধন অনুভব করা যায়।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে উপন্যাসের শিল্পরূপ নতুন মাত্রা পেয়েছে। তাঁর নানা স্বাদের দশটি উপন্যাস চয়ন করে প্রকাশিত হল এই অসামান্য সংকলন। এতে আছে এইসব স্মরণীয় উপন্যাসঃ যুবক যুবতীরা, সরল সত্য, সংসারে এক সন্ন্যাসী, কালো রাস্তা সাদা বাড়ি, কবি ও নর্তকী, তুমি কে, ছবির মানুষ, নবজাতক, জল-জঙ্গলের কাব্য এবং স্বর্গের নীচে মানুষ।
সূচিপত্র –
যুবক যুবতীরা
সরল সত্য
সংসারে এক সন্ন্যাসী
কালো রাস্তা সাদা বাড়ি
কবি ও নর্তকী
তুমি কে?
ছবির মানুষ
নবজাতক
জল-জঙ্গলের কাব্য
স্বর্গের নীচে মানুষ
গ্রন্থপরিচয়
Reviews
There are no reviews yet.