লেখাগুলো শেষ করে কেমন যেন ঝিম ধরে গেছিল। হিদারামগলির মতো আমিও যেন শরতের আকাশ আর বাতাসে এক অনন্ত ঐশ্বর্যের সন্ধান পেয়ে ভেবেছিলাম, বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের চেহারাটা একদম অন্য রকম। কিন্তু বইটা শেষ হতেই মনে হল, নাঃ, উঁচু-উঁচু বাড়ির ছায়ায় একফালি হয়ে পড়ে থাকা, আবর্জনা আর ড্যাম্পে হতশ্রী গলিটাই বাস্তব, যেখানে সূর্যের দেখা পেতে না পেতেই সে কোথায় গায়েব হয়ে যায়। এই লেখাগুলোর বাইরেও থেকে গেছে বারোয়ারি উপন্যাস “মহাকাশযাত্রী বাঙ্গালি”-র একটি অধ্যায়, যা ‘কল্পবিশ্ব’ ওয়েবজিনের প্রথম বর্ষ চতুর্থ সংখ্যায় পুনঃপ্রকাশিত হয়েছিল, এবং ‘বেতার জগৎ’-এ প্রকাশিত অবিস্মরণীয় বারোয়ারি (আদতে চারজন লেখক: প্রেমেন্দ্র মিত্র, সত্যজিৎ রায়, দিলীপ রায়চৌধুরী, এবং অদ্রীশ বর্ধন-এর লেখা) উপন্যাসের একটি অংশ। পরবর্তী সংকলনে এগুলো যুক্ত হবে, এমনটাই আশা করি।
দিলীপ রায়চৌধুরী মাত্র ৩৮ বছর আমাদের মধ্যে ছিলেন। যদি এটা ৩৮ না হয়ে ৮৮ হত, তাহলে আমরা কি লাভবান হতাম? নিঃসন্দেহে হতাম, কারণ তাঁর মতো এমন স্বচ্ছ বিজ্ঞানচেতনার অধিকারী এক সুলেখক কলম চালিয়ে গেলে বাংলায় বিজ্ঞানবিষয়ক সাহিত্য (পপুলার সায়েন্স) এবং কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য দুই-ই যে সাবালকত্ব পেত, এবিষয়ে আমি নিশ্চিত। আবার মুজতবা আলির কথাটাও মনে পড়ে। তিনি বলেছিলেন, তাজমহল যদি আরো অনেক বড়ো হত, তাহলে তার সৌন্দর্যের বদলে বিশালত্ব দেখেই লোকে বাকরুদ্ধ হত। বাংলা কল্পবিজ্ঞানের মরুভূমিতে মেঘের স্বপন দেখে বাসা যাঁরা বেঁধেছিলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই বুড়ো হয়েছেন, অনেকে দড়কচা মেরেছেন (সত্যভাষণের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী), বড়ো হয়েছেন খুব-খুব কম লেখক। কিন্তু দিলীপ রায়চৌধুরী, এই স্বল্প পরিমাণ রচনা দিয়েই, রয়ে গেছেন ও থাকবেন চিরতরুণ, হাস্যোজ্জ্বল, সপ্রাণ।
— ঋজু গাঙ্গুলি
Reviews
There are no reviews yet.