নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের কিশোর সাহিত্যের প্রায় বেশ কিছু গল্প থেকে গেছিল বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে। সেইসব গল্পগুলিকে এক মলাটের মধ্যে পাওয়ার মজাটাই আলাদা। এই সংকলনে সেই চেষ্টাই করা হয়েছে।
তোমরা ভুত মানো না? আমি মানি। ভূত-পেত্নি-কন্ধকাটা, মামদো, শাঁকচুন্নি- সব মানি।
“মরেছিল পাড়ার হারান খুড়োর নাস্তী পিসি। পিসির গায়ের রং ছিল আলকাতরার মতো, চুলগুলো ঝাঁটার কাঠির মতো, আর চোখ! সে চোখ দেখে ছেলেরা আঁৎকে উঠত।
সেই পিসি মরল কলেরাতে। কেউ মরা ছোঁয় না-যেতে চায় না শ্মশানে। জ্যান্ত অবস্থাতেই যাকে দেখলে পিলে চমকে ওঠে, মরে সে-যে নির্ঘাত পেত্নি হবে তাতে আর সন্দেহ কি!
যখন শ্মশানে এলাম, তখন গা ছমছম করছে আমাদের। নীচে গঙ্গার কালো জল ছলছল করছে- দূরে ডাকছে হুতুম প্যাঁচা: ভূত-ভূত-ভূতুম!-
কী বিশ্রী শব্দ! শুনলেই মনে হয় বলছে :
ভূত-ভূত-ভূতুম-
আমি বেহ্মদত্যির কুটুম।
হঠাৎ-
সন্তোষ চেঁচিয়ে উঠল: ও কী!
নিমাইমামা আঁতকে গান থামিয়ে দিলে। আমরা তাকিয়ে দেখি- যা দেখলাম- তোমরা তা দেখলে ঠিক দাঁতকপাটি লেগে যেত। মড়ার পা দুখানা ছিল একেবারে ঘাটের কাছে- গঙ্গার জল ছুঁয়ে। লণ্ঠনের টিমটিমে আলোতে আমরা দেখলাম সেই মড়া সরসর করে সোজা জলে নেমে যাচ্ছে।
নাঃ- হেঁটে যাচ্ছে না। যেমন ছিল- তেমনি শুয়েই নেমে যাচ্ছে। যেন তার পিঠের তলায় কেউ দুটো চাকা এঁটে দিয়েছে।
ওরে বাপরে বাপ….
ঝপাঝপ করে শব্দ। সড়াক করে একটানা নান্তী পিসি পাড়ে উঠে এল। আর লণ্ঠনের আলোয় দেখি-
প্রকাণ্ড একটা কচ্ছপ জলে বিরাট আলোড়ন দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। এতক্ষণ তবে মড়াকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল ওই কচ্ছপের জাঁদরেল কামড়!……
দুর্লভ হাসির গল্পের সংগ্রহ
– Aditi Sannigrahi
Good book