দদানি চ আত্মপূর্ণতাম। দান করতে করতে নিজেকে পূর্ণ করাই যজ্ঞ। কর্মানি চ যজ্ঞাধিপতি। কর্মই যজ্ঞের অধিপতি। অগ্নির্ভি যজ্ঞসহায়ঃ। অগ্নি যজ্ঞের সহায়। দেবানাম্ তুষ্টয় যজ্ঞে। দেবতারা যজ্ঞে তুষ্ট হন। যজ্ঞাৎ অন্ন সমুৎপন্নে। যজ্ঞ দ্বারা অন্ন উৎপন্ন হয়। এ সকল বাক্যই যজ্ঞ ও যজ্ঞকর্মের বিষয়ে আমরা শুনে থাকি। এর কিছু আমি প্রক্ষিপ্ত ও অনর্থক বলে বিশ্বাস করি।
— অর্থাৎ যজ্ঞ বিষয়ে আমাদের যা জ্ঞান তা সব সঠিক নয়?
— দান করতে করতে নিজেকে পূর্ণ করার নাম যজ্ঞ। কিন্তু সেই দান যদি আড়ম্বর ও বাহ্যিক, আত্মগৌরবার্জনের হয়, তবে সে দান কোন কর্মের জন্য অবশিষ্ট থাকে? যজ্ঞ অর্থে আমি কর্ম বুঝে থাকি। আপনার ও সংশ্লিষ্ট সকলের উন্নতিকল্পে যে কর্ম, যা অপরের ক্লেশের কারণ হয়ে ওঠে না, সেই কর্মই যজ্ঞমধ্যে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু আমার সংশয়, যজ্ঞ দ্বারা দেবতাদের তুষ্ট করা যায় কি না!
— কেন? এই যে যজ্ঞকুণ্ডে দেবতার উদ্দেশে স্তব গীত হয়? তাঁদের উৎসর্গ করে যব ও হব্য প্রদান করা হয়!
— তাঁরা কি তা গ্রহণ করেন? এই হব্য, সোম, মাংস কীভাবে তাঁদের নিকট পৌঁছায়? তাঁরা কীরূপে এ-সকল প্রাপ্ত হন?
— অগ্নি তাঁদের হব্য বহন করে নিয়ে যান!
— অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত কোনও বস্তু কি কদাচ আর পূর্বের ন্যায় থাকে? যে যব, মাংস অগ্নিতে নিক্ষেপ করা হয়, তা তো দগ্ধ হয়ে যায়, তবে আর তা দেবতার নিকট কী প্রকারে প্রেরিত হয়?
তরুণী বিদুষী পুষার বাক্যে মধু চিন্তিত হল। সে যা বলছে, তা অসত্য নয়। তবে কি সকল যজ্ঞ কেবল বহিরঙ্গের ক্রিয়ামাত্র? ওই যে সুউচ্চ অগ্নিবেদি, ওই যে ত্রিকোণকুণ্ড অগ্নিচিহ্নের নিকট উপবিষ্ট ঋত্বিকগণ, অদ্যকার ক্রিয়া সমাপনান্তে সমবেতভাবে আহারে ব্যস্ত, তবে কি এ-সকল কেবলই বাহ্যিক কোনও উদ্দেশ্যসাধনে? এখানে প্রাণ কই? এর উদ্দেশ্য কী? যর্যাবর্তে কিছুকাল শিকারযোগ্য পশুর অভাব। বর্ষাগম বিলম্বিত। ক্রমে অস্তিত্বের সংকটের মুখে পড়তে থাকা এক জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যত কর্তব্যের রূপরেখা নির্ণয় করতে যুবক বভ্রুবর্ণ মুখোমুখি হয়েছে আবহমান কালের এক সত্যের। মানব সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে ক্রমে মানুষের আচরণে মলিন হতে থাকা প্রকৃতির এই ক্ষয়ের ঐতিহ্য কত পুরোনো কে জানে! আসন্ন বিপর্যয়ের আশু-সমাধানের নিবিড় অনুসন্ধান তাকে দাঁড় করিয়েছে আরও এক গোপন সত্যের মুখোমুখি। যর্যাবর্ত সহ সমগ্র আর্য সভ্যতার জীবনস্বরূপা নদী সরস্বতীর জল-উৎস অবরুদ্ধ করে রেখেছে কে এক মায়াশক্তিধর। এই সংকটমুক্তির একমাত্র উপায় জানেন মঘনব ইন্দ্র। অথচ তিনি বহুকাল আর্যাবর্তে অনুপস্থিত।

মঘবনের সাহায্যপ্রার্থনায় বভ্রুবর্ণ যাত্রা শুরু করে দুর্গম হিমবন্ত হয়ে মঘবনের দেশে। তার যাত্রাপথের নিবিড় আলোয় ফুটে ওঠে প্রকৃতি, মানুষ, নদী আর নক্ষত্রের অবিচ্ছেদ্য সব বন্ধনের ইঙ্গিত।

প্রাচীন বৈদিক সভ্যতার প্রেক্ষাপটে ঘটতে থাকা এই আখ্যানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নদী-সভ্যতার অবলুপ্ত কত বেদনার স্রোত, মানবসভ্যতার কত আলোছায়ার কাহিনি, উপকাহিনি, আবিষ্কার, যা আজও সমান প্রাসঙ্গিক।

Weight 0.5 kg
Dimensions 21 × 18 × 2 cm
Author Name

Binding

Language

Publisher

Publishing Year

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “Ekachetat Nadinang || Tamal Bandyopadhyay”

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like…

Recently Viewed

  • Recently Viewed Products is a function which helps you keep track of your recent viewing history.
    Shop Now
Ekachetat Nadinang || Tamal Bandyopadhyay
Original price was: ₹450.Current price is: ₹360.

Only 4 left in stock

Estimated delivery on 6 - 11 July, 2024