বালকদের পশ্চিম দিকের বাড়ি, যার ন্যাড়া ছাদে ওঠার জন্য কাঠের সিঁড়িতে বসে হিমাংশু আশালতার অপেক্ষায় থাকতেন, কিছুটা বদলে গেছে। ছাদের তিন দিকে ইটের দেওয়াল উঠে সেটি বারান্দা হয়ে গেছে। মাথায় উঠেছে টিনের চাল। পাকা সিঁড়ি হয়েছে। ঘর দুটির একটিতে বালকের নতুন বৌদি রাতে থাকেন, সঙ্গে থাকে জোসনা বা তার পরের বোন পতু। গৌরীশঙ্কর বাড়ি এলে মেয়েগুলো বারান্দাতেই শোয়। অন্য ঘরটায় চন্দ্রশেখর আর বড়ো বৌদি ছোটো দুটো মেয়ে আর ছেলেটাকে নিয়ে রাতে ঘুমোন। দিনের বেলায় পশ্চিমের বাখুলে আসার সময়ই হয় না কারোর। বউদিদের সারা দিনই কাটে রান্নাঘরে। বালক বাড়ি এলে খেলার মাঠে, গাছে আর নদী কিংবা খালের জলে কাটাবার ফাঁকে দুপুর বেলায় খানিক সময় বই খাতা নিয়ে বসে। রাতে বারান্দায় দড়ির খাটিয়া পেতে ঘুমোয়।
বালক বাড়ি থাকলে দুপুরের দিকে এখানেই পড়তে আসে ফেলি। গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়ি এল বালক। প্রথম কয়েক দিন ফেলি বই খাতা নিয়ে এসেও ফিরে গেল। বালক ভাত খাওয়ার পর সেই ঘরে ঢুকে পড়তে না বসে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। তবুও একদিন ফেলি তাকে ধরে ফেলল রাস্তায়, নির্জন দুপুরে।
–এই ভূত, কুথায় থাকুস? পড়াবি না?
বালকের চোখ ফেলির বুকের দিকে তাকিয়ে সম্মোহিত হয়ে যায়। আবার সেই একলা ঘরে সে আর ফেলি। অবহেলায় বই খাতা পড়ে থাকে একদিকে। ধীরে ধীরে সেই দিনটা এসে পড়ে। বাইরে অসহ্য রোদে গরম হাওয়া কেঁপে কেঁপে উপরে উঠে যাচ্ছে। ঘরের ভিতর ঘামে ভিজে গেছে ফেলির ফ্রক। দড়ির খাট দাঁড় করিয়ে ঘরের ভিতর আর একটা ঘর বানাল সে। তার ভিতরে ঢুকে বলল, –এখানে আসবি না ভূত। বড্ড গরম, আমি জামা খুলে শুচ্ছি।
বালক একা বসে থাকে, তার বুক কাঁপে। খাটের ওপাশটা চুম্বকের মতো টানতে থাকে। কতক্ষণ পরে, জানে না বালক, কম্পিত বুকে নিষেধের বেড়ার ভিতরে ঢুকে পড়ে। ফেলিকে দেখে না সে, দেখে এক পরিপূর্ণ নারী শরীর! সম্পূর্ণ অচেনা সেই রূপ তাকে অন্ধ, বধির করে দেয়। অন্য কেউ যেন তাকে চালনা করে নিয়ে গিয়ে উপুড় করে ফেলে দেয় সেই শরীরের উপরে। তারপরে কী হয় কিছুই বোঝে না বালক। কতক্ষণ পরে তাও জানে না, শরীরভাঙা এক সুতীব্র সুখানুভব উদগীরিত হতে থাকে দমকে দমকে। ভূগোলে পড়া আগ্নেয়গিরির লাভা বিস্ফোরণ আবছা মনে পড়ে তার। এক নিমেষেই বালক সদানন্দময় জগত থেকে উৎক্ষিপ্ত হয় সুখ ও বিষাদে মাখামাখি অপরাধময় অন্য এক জগতে।
হাফ প্যাডেলের কাল
প্রচ্ছদ : সুলিপ্ত মণ্ডল
অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত
Reviews
There are no reviews yet.