লেখা ছাড়া অন্য কোনো উপায়েই যে সব কথা জানানো যায় না, সেই কথাগুলি জানাবার জন্যই আমি লিখি। অন্য লেখকেরা যাই বলুন, আমার এ বিষয়ে কোন সন্দেহই নেই যে, তাঁরা কেন লেখেন প্রশ্নের জবাবও এই ….
‘জীবনকে আমি যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছি অন্যকে তার অতি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেবার তাগিদে আমি লিখি। আমি যা জেনেছি এ জগতে কেউ তা জানে না (জল পড়ে পাতা নড়ে জানা নয়)। কিন্তু সকলের সঙ্গে আমার জানার এক শব্দার্থক ব্যাপক সমভিত্তি আছে। তাকে আশ্রয় করে আমার খানিকটা উপলব্ধি অন্যকে দান করি।
দান করি বলা ঠিক নয়,—পাইয়ে দিই। তাকে উপলব্ধি করাই। আমার লেখাকে আশ্রয় করে সে কতকগুলি মানসিক অভিজ্ঞতা লাভ করে—আমি লিখে পাইয়ে না দিলে বেচারী যা কোনদিন পেত না।….
‘কলম-পেষার পেশা বেছে নিয়ে প্রশংসায় আনন্দ পাই বলে দুঃখ নেই, এখনো মাঝে মাঝে অন্যমনস্কতার দুর্বল মুহূর্তে অহঙ্কার বোধ করি বলে আপশোষ জাগে যে, খাঁটি লেখক কবে হব।
……এই উপন্যাসে কোন আদর্শবাদের আতিশয্য নাই—মাতৃত্বকে দেবীত্বের পর্যায়ে পৌঁছাইবার কোন কাব্যসুলভ, কৃত্রিম চেষ্টা নাই। জননী ও গৃহিণী সংসার-বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু : প্রেয়সী ইহার প্রত্যন্তপ্রদেশের একটা বিচিত্র ক্ষণস্থায়ী বর্ণপ্রলেপ। কাজেই বাস্তব জীবনে প্রত্যেক নারীর মধ্যেই প্রিয়া হইতে জননীর বিকাশ খুব স্বাভাবিক পরিণতি। শ্যামার জীবনে তাহার যৌবনের প্রণয়াবেশ অপেক্ষা তাহার গৃহিণীত্বই সুপরিস্ফুট। তাহার স্বামী খেয়ালী, দুর্বলচিত্ত ও দায়িত্ববোধহীন বলিয়াই প্রণয়ের ঘোর তাহার শীঘ্র ই কাটিয়া গিয়াছে ও সুস্থ দাম্পত্যজীবন তাহার কোনও দিন গড়িয়া উঠে নাই। সংসার- পরিচালনার শ্রান্তিহীন পেষণে তাহার – সমস্ত সূক্ষ্ম, সুকুমার উন্মেষগুলি উম্মলিত হইয়া গিয়াছে।….
‘সন্তানপ্রসবের পর হইতে জননীর জীবনারম্ভ। কাজেই শ্যামার প্রথম দুইটি সন্তানের জন্মে তাহার মানস প্রতিক্রিয়া সূক্ষ্ম ও বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হইয়াছে। প্রথম প্রসবের পর তাহার অদ্ভুত, স্তিমিত-বেদনা-বিদ্ধ অনুভূতি ; সূতিকাগৃহে অজ্ঞাত ভয়ের ও থাকিয়া থাকিয়া বিস্ময়মিশ্রিত আনন্দের নিবিড় স্পর্শ-শিহরণ, পিতৃপুরুষের অদৃশ্য জনতার রহস্যময়, অস্পষ্ট উপলব্ধি ; শিশুর অকাল মৃত্যুতে তাহার অনুশোচনা ও আত্মগ্লানি—এই সমস্ত জননীর প্রথম অভিজ্ঞতার চমৎকার বিশ্লেষণ।
Reviews
There are no reviews yet.