A novel in Bengali
বাংলার নবাবী আমল তখন মধ্যগগনে, অষ্টাদশ বর্ষীয় এক স্বপ্নদর্শী যুবা বসলেন নদিয়া রাজ্যের সিংহাসনে, নাম কৃষ্ণচন্দ্র রায়। পিতৃপুরুষদের বিপুল ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে দিশাহারা এক জমিদার থেকে গাঙ্গেয় বাংলার এক কিংবদন্তি রাজা হয়ে ওঠার অভিযাত্রা কি ছিল অতই সহজ? রাজনৈতিক ক্ষমতা বিশেষ না থাকলেও তিনি বেছে নিলেন কোন সে এক ভিন্ন পথ? একদিকে ব্রাহ্মণ্য স্মার্তসমাজের প্রবল চাপ, অন্যদিকে নবাবদের রক্তচক্ষুর মধ্যে দাঁড়িয়ে কী করে অচিরেই হয়ে উঠলেন বহু-ঈশ্বরবাদী সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার চোখে বাংলার বিক্রমাদিত্য?
নদীয়াধিপতি মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময়কাল (১৭১০-১৭৮৩) গাঙ্গেয় বাংলার সামাজিক ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য বাঁক। প্রচলিত ইতিহাস তাঁকে একজন রক্ষণশীল হিন্দু ব্রাহ্মণ্য সমাজপতি, কখনও কুচক্রী, কখনও বা অবিমৃষ্যকারী রাজা হিসাবে দেখাতে চাইলেও, এ তাঁর বহুমাত্রিক ও বহুবর্ণিল চরিত্রের প্রতি ঘোরতর অন্যায় ছাড়া আর কী! অথচ এই মানুষটিকে না বুঝলে কিছুতেই যে বোঝা হয়ে ওঠে না আঠেরো শতকের মধ্যভাগে বাংলার ইতিহাসের বহু ঈশ্বরবাদী হিন্দু সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়! দিল্লির মোগল সাম্রাজ্যের বজ্রমুষ্ঠি আলগা হওয়া আরম্ভ হতেই ভারতবর্ষের বিভিন্নপ্রান্তে হিন্দু রাজন্যবর্গ ও ব্রাহ্মণদের মধ্যে অঙ্কুরিত হতে শুরু করে পালাবদলের ভাবনা। কিন্তু ঋণগ্রস্ত, রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে দুর্বল অতিবাস্তববাদী এই জমিদার যেতে চাননি কোনও প্রত্যক্ষ সংঘর্ষের পথে। তিনি বরং বেছে নিতে চেয়েছিলেন অন্য এক পথ। কোন সে পথ? দুই খণ্ডে বিধৃত এই উপন্যাস বুঝতে চেয়েছে পলাশীর যুদ্ধের আগের ও পরের বিস্তৃত এক অন্তঃসলিল পটপরিবর্তনের পরিসরকে।
Reviews
There are no reviews yet.