This Book Is Written By RAJA BHATTACHARYAY
LAXMAN CHARIT MANAS || লক্ষ্মণ চরিত মানস
Original price was: ₹350.₹263Current price is: ₹263.
Only 3 left in stock
Only 3 left in stock
Original price was: ₹350.₹263Current price is: ₹263.
Only 3 left in stock
This Book Is Written By RAJA BHATTACHARYAY
Only 3 left in stock
Notifications
– Anirban (verified owner)
বইয়ের শুরুতে যেখানে মুখবন্ধ বা ভূমিকা বা ধন্যবাদান্তে থাকে, সেখানে লেখক কৈফিয়ত দিয়েছেন। দয়া করে এটি এড়িয়ে যাবেন না। লেখক জানিয়েছেন তার লেখাটি বাল্মীকি-প্রসূত রামায়ণ কে আধার করে লেখা, কৃত্তিবাসী নয়, তবে পদে পদে বাল্মীকির লক্ষণের সাথে মিল বা অমিল খুঁজতে গেলে হতাশ হতে হবে।
দ্বিতীয় কৈফিয়তটি হলো, কেন লক্ষণ? এখানে লেখক স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন উপেক্ষিত অথচ শক্তিশালী মানুষদের প্রতি আমাদের টান স্বাভাবিক। রাম সর্বদা সর্বজন বিদিত ও পূজিত, সবার স্নেহভাজন এবং শ্রদ্ধেয়, সেখানে লক্ষণের পরিচয় রামের সহোদর হিসেবে। অথচ তিনিও ক্ষত্রিয়, রামের চেয়ে কিছুদিনের ছোট। অস্ত্রবিদ্যা, সাহসে রামের সমান। অথচ রামের সব অভিযান, রণভূমিতে লক্ষণ শুধু তার সহচর এবং পরিচারক হিসেবেই কাহিনীতে বর্ণিত।
এবার আসা যাক কাহিনীতে। কাহিনীর শুরু আর শেষে যে ঘটনা সেটার ব্যাপারে আমার আগে থেকে কোনো জ্ঞান নেই, তাই সেটা আপনারা পড়ে নেবেন।
রামায়ণের মূল কাহিনী দিয়ে শুরু করি। রাম লক্ষণ দুজনেই যখন অস্ত্রবিদ্যায় মনোযোগী, তখন দশরথ মাঝে মধ্যেই আকুল হয়ে পড়তেন রামকে দেখার জন্য। বাবার জন্যে ছুটে যেতেন রাম, সভার বাইরে একা লক্ষণ দাঁড়িয়ে রামের অপেক্ষা করতেন, দশরথ কখনো লক্ষণের জন্য সমান স্নেহ অনুভব করেননি। লক্ষণের নিজের মা সুমিত্রার কাছেও রাম স্নেহাধিক্যতা পেয়েছেন। মৃগয়ায় গেলেই সুমিত্রা লক্ষণকে স্মরণ করিয়ে দিতেন রামের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। তাকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা লক্ষণের দায়িত্ব। এসবে লক্ষণ কখনোই রাগ করেনি বা ক্ষুন্ন মনোভাব পোষণ করেননি। রামের সহচর হিসেবেই সে নিজেকে দেখে এসেছে।
রাক্ষসের সাথে যুদ্ধে রাম লক্ষণ দুজনেই যখন যুদ্ধক্ষেত্রে, দুজনেই জানেন রাম বিষ্ণুর অবতার, যুদ্ধে পরাজয় অসম্ভব। কিন্তু লক্ষণ একজন সাধারণ মানুষ, তাকে সমস্ত ক্ষেত্রে সমস্ত যুদ্ধে নিজের বাহুবল আর দূরদর্শিতার ওপরেই নির্ভর থাকতে হয়েছে।
কৈকেয়ীর কথায় দশরথ যখন রামকে বনবাসের আজ্ঞা দিলেন, মনে রাখতে হবে সেই আজ্ঞা কিন্তু শুধুমাত্র রামের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল। সীতা পতিব্রতা হিসেবে রামের সঙ্গ নেবেন এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এখানেও শুধু মাত্র রামের এক বাক্যে লক্ষণ রামের সঙ্গে বনবাসে রওনা হয়।
বনবাসে রাম যখন সীতাকে পেয়েও বনবাসের অনেকতা কষ্ট ভুলতে সক্ষম হয়েছে। তখন লক্ষণ এই দুজনের সেবায় অনেক বিনিদ্রিত রাত পার করেছে। উর্মিলা লক্ষণের সঙ্গে আসতে চাইলেও লক্ষণ নিষেধ করেছিলে, এই কারণে যে তাতে লক্ষণের দ্বারা রাম আর সীতার উপযুক্ত সেবা হবে না। ১৪ বছর বনবাসের প্রায় ১৩ বছর রাম-সীতা একসঙ্গে জীবন যাপন করেছেন, অথচ লক্ষণ তার বিবাহিত জীবনের, যৌবনের ১৪ বছর কাটিয়েছেন উর্মিলাকে ছাড়া। বনবাসে থেকেও রাম-সীতা একে ওপরের সান্নিধ্য পেয়েছে, আর লক্ষণ সর্বদা চিরসজাগ দায়িত্বপরায়ণ রক্ষকের ভূমিকা পালন করেছে। রামের চেয়ে এই বনবাস লক্ষণের পক্ষে ছিল অনেক বেশি একাকী আর কষ্টকর।
মারিচ বধের নেপথ্যে আছে এক অপমানজনক ঘটনা। সীতার অনুরোধে রাম সোনার হরিণ ধরার জন্য বেরিয়ে পড়ে, অথচ লক্ষণ তার ষষ্ঠেন্দ্রীয়ের দ্বারা রাম-সীতা দুজনকেই আগে জানিয়েছিল এ কোনো মায়াবী রাক্ষস, হরিণ নয়। লক্ষণের কথা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে স্ত্রীর বায়নায় রাম বেরিয়ে পড়ে। লক্ষণ ভার নেই সীতার। এই অবস্থায় মারিচ রামের গলা নকল করে চিৎকার করলে সীতা লক্ষণকে রামের কাছে যাবার জন্য বলে। একসাথে বড়ো হয়ে ওঠা লক্ষণ জানে এই গলা রামের নয়, সে দৃঢ়ভাবে জানায় এ সেই মায়াবী রাক্ষসের গলা। ঠিক সেই মুহূর্তে সীতা বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে লক্ষণকে দুশ্চরিত্র আখ্যা দেয়, নিজের বড়ো ভাইকে বিপদে ফেলে তার স্ত্রীকে সম্ভোগের অভিযোগ তোলে। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে লক্ষণ ছুটে যায় রামের কাছে, ফিরে এসে সীতাকে পায়না তারা। এখানেও রাম প্রত্যক্ষভাবে লক্ষণকেই দায়ী করে।
সীতাকে হারিয়ে রামের বিলাপ শুরু হয়, এবং তা চলতে থাকে দিনের পর দিন। লক্ষণ সান্তনা দেয় রামকে, তার খাওয়া, নিদ্রা, সেবা কোনোকিছুরই ত্রুটি রাখেনা লক্ষণ। অথচ রাম এক মুহূর্তের জন্য ভাবেনা, তার ভাই দীর্ঘ ১৩ বছর স্ত্রী বিনা দিন যাপন করছেন।
এভাবেই লক্ষণ রামের ছত্রছায়ায় থেকে উপেক্ষিত আর বঞ্চিত।
এই বইতে রামায়ণের আর্য-অনার্য প্রভেদটা বেশ ভালোভাবে দেখিয়েছেন লেখক। স্বাধীনচেতা ,সাহসী, যুদ্ধে পারদর্শী অনার্য সুর্পণখার শাস্তি দাম্ভিক রাম দিয়েছেন, কারণ আর্য সমাজে এরকম নারী ম্লেচ্ছ আর দুষ্ট বলেই পরিচিত, অথচ বালীকে অধর্ম উপায়ে বধ করে রাম নিজের স্বার্থ সিদ্ধ করতে চেয়েছেন। এই দুই ক্ষেত্রে লক্ষণ রামের পশে থেকেছে, কিন্তু পুরোপুরি সমর্থন করতে পারেনি।
লঙ্কা জয়ের পরেও যখন রাম সীতাকে অস্পৃশ্য বলে অপমান করলো, কারণ সীতা হয়তো এতদিনে রাবন এবং অন্যদের শয্যাসঙ্গীনী হয়েছে, তখন পুরোনো কথা ভুলে লক্ষণ সীতার পক্ষে রামকে তিরস্কার করেছে। আবার অযোধ্যায় সস্ত্রীক রাম ফিরে গিয়েও প্রজাদের কথায় যখন রাম সীতাকে প্রত্যাহার করে, তখন সেই পাপকাজ রাম লক্ষণকে দিয়েই করিয়েছে।
এটা পাঠ-প্রতিক্রিয়া নয়। এক শক্তিশালী, দায়িত্বপরায়ণ সাধারণ মানব যিনি রামের সমকক্ষ হয়েও কখনো পূজিত হননি, সবসময় নিজেকে আড়ালে রেখেছেন, তার সম্পর্কে কিছু কথা জানানোর ইচ্ছে হলো, তাই কিছু কনটেন্ট ও ভাগ করে নিলাম। তবে বইটা অবশ্যই পড়বেন।