ঈশানী রায়চৌধুরীর উপন্যাস।
Two Girls there are: within the house
One Sits; the Other, without;
Daylong a duet of shade and light
Plays between these.
সিলভিয়া প্লাথের এ লাইন ধরেই বলা যায় এ গল্প নয়না আর নয়নার। আসলে ডোডো এবং ফিঙের। বয়সের ফারাক আছে। সময়ের দূরত্ব আছে। তবু যন্ত্রণার লোনা জলের স্বাদ এক, একই। তাই এক নয়নার শৈশবেই বাড়ির দাদাদের হাতে না-ফোটা স্তনবৃন্ত মুচড়ে যাওয়ার কষ্ট, লেপের তলায় প্যান্টের ভিতর ঢুকে যাওয়া হাত সরাতে না পারার অসহয়তা কোথায় যেন মিশে যায়। আর এক নয়নার বন্ধু জোর করেই তার ঠোঁট চুষে নেয় ফাঁকা ক্লাসে। এই যে শৈশব থেকে কিশোরীবেলা পেরোতে পেরোতে যৌন হেনস্তার শিকার হওয়া, এই যে কুঁকড়ে যাওয়া, এই যে পিকনিক করতে গিয়ে দেখে ফেলা লেডিস টয়লেটের দেওয়ালের ফুটোয় জুলুজুল করছে পুরুষ চোখ– এ আসলে শুধুমাত্র নয়নাদেরই গল্প নয়। এই অভিজ্ঞতার নিরিখে অনেকেই নিজের মধ্যে আবিষ্কার করবেন নয়নাকে। ঈশানী রায়চৌধুরী তাঁর ‘নয়না আর জোনাকিগাছ’ উপন্যাসে বলে যান এইসব নয়নাদের আলোছায়া জীবনের কথা, বলে যান তাদের শিউরে ওঠা আর কুঁকড়ে যাওয়া জীবনের গল্প। আসলে নয়নাদের কথা বলতে বলতে বলেন সেই আবহমান নারীটির কথা, যার ঊরু কামড়ে ধরেছে হেনস্তার সাপ। যার নিতম্বে প্রত্যঙ্গ ঠেকাতে উৎসুক বাইরের লুম্পেন-বিশ্ব। বাড়ির লোকের চোখের আড়ল করে যার শরীরে অস্বস্তির ছোঁয়া দিয়ে ঘিনঘিনে পোকা ছেড়ে দেওয়া যেন এক ধরনের উল্লাস। আর আজকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা উপলব্ধি করি এই ক্রনিক অসুখের একটা মারাত্মক দিক হল সেই অসুখ চেপে রাখা। ঈশানী কোথাও সোচ্চার নন, কিন্তু নয়নারা যখন তাদের যন্ত্রণা, অদৃশ্য রক্তক্ষরণের কথা বলতে থাকে তখন কোথাও যন্ত্রণায় লাল হয় আকাশ। যে আকাশের দিকে তাকিয়ে একইরকম ঘিনঘিনে অনুভূতি ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা সমাজেই। কেন পাশের মানুষটাকে এমন কষ্ট দেওয়া? কেন আমরা নয়নার কথায় কান পাতব না, যখন সে বলে — “তোদের প্রবলেম কী বল তো? মেয়েরা তোদের কাছে এখনও কোথাও না কোথাও ‘মেয়েছেলে’। উঁহুঁ, আমাকে ফেমিনিস্ট বলবি না। আমি মেয়ে হিসেবে কোনও বাড়তি সুযোগ নিইনি কখনও। এদিকে লেডিজ সিটে ঠেলেঠুলে গিয়ে বসিওনি বা ওদিকে ব্রা পুড়িয়ে বিপ্লবও করিনি। আমি চাই আমাকে তোরা সমান মর্যাদা দিবি। ইন ফ্যাক্ট, শুধু আমাকে নয়, ইন্দিরা গান্ধি থেকে কাজের মাসি রমলাদি বা সোনাগাছির ছোটো যমুনা… সকলকেই।”
এই মর্যাদা পেলেই নয়নারা জোনাকিগাছ হয়ে ওঠে। সকলের মনে নয়, প্রকৃত প্রেমিকের মনেই সে গাছের বীজ পোঁতা থাকে। কিন্তু এই নয়না বা নয়নারা কি জীবনে তার দেখা পাবে? ডোডো কিংবা ফিঙে কার জীবনে সত্যি করে জোনাকির গাছ হয়ে উঠবে? তার উত্তর এ উপন্যাসে। আসলে মিতকথনে, সমান্তরাল আখ্যানের সেই মর্যাদা, সমানুভূতির দেশের ঠিকানাটাই সভ্যতার বুকপকেটে গুঁজে দিতে চান লেখক। সে ঠিকানায় বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি বোধ হয় কেউই নেবেন না, নেওয়া উচিতও নয়।
Reviews
There are no reviews yet.