মহাভারতের মহানায়িকা কে?
দ্রৌপদী? গান্ধারী?কুন্তি?
না এরা তো শুধু নিমিত্ত,শুরুর শেষ করেছে মাত্র। দীর্ঘ দিনের বহিরঙ্গের প্রতিশোধলিপ্সা আর ভেতরের গাঙ্গেয়ের প্রত্যাখিত প্রেমের তুষের আগুনের দগ্ধ এক ধীবরকন্যার ধৈর্য ধরে আর্য রক্তে অনার্য ধারা প্রবাহের প্রারম্ভের পরিচালিকা মহাভারতের অষ্টাদশের প্রথম নায়িকা সত্যবতী র ভূমিকা ভূভারতে যারা কভু এই অদ্ভুত ধ্রুপদসম সৃষ্টি পড়েনি তাদের কাছে অজ্ঞাত,রূপকথা।
অপ্সরা গর্ভে জন্ম রাজনকন্যার ভাগ্যলিপির লেখা বড্ড দূরহ, কন্টকাকীর্ণ পরিহাসরত সর্বদা।ধীবরদুহিতার পরিচয়ে মৎস্যগন্ধা অনন্য অসাধারণ কিন্তু স্বভাবে রাজকীয় ধারার পুরোটাই বহন করেছেন শৈশব থেকেই।ভরাযৌবনার তরী তীরে ভেড়ানোর পরিকল্পনায় পিতার কাছে ব্যক্ত হয়ে পড়ে দেবব্রতের প্রতি অনুরক্ততা।শিউরে উঠেন পিতা;শঙ্কায় আশঙ্কায় সত্যবতীর ভবিষ্যতে কি আছে?দেবভোগ্যাযোনীজাত বলে দেবব্রত যাকে করেনি গ্ৰহন,তবে কি অদ্রিকাপুত্রীর কাছে অস্পৃশ্য থাকবে রাজসুখের স্বীকারোক্তি শান্তি সন্তানের সাথে সম্ভোগের সম্ভাবনা?
কিন্তু মহাকাল লিখছেন যা নিজহস্তে,করেছেন যেখানে সব আয়োজন,দিয়েছেন বারংবার ভাগ্যপীড়িতা সত্যবতীকে সুযোগ সম্ভবনা ক্ষেত্র সেখানে সাম্রাজ্যের সাম্রাজ্ঞী হতে বাধাই বা কোথায়?
সত্যবতী প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন কিন্তু ভবিষ্যতের প্রতারনায় পড়েননি, কূটকৌশলের কুক্ষিগত করছেন হস্তিনাপুরের সিংহাসন,পরাশরনন্দন বেদব্যাসের মাতৃত্বের বিনিময়ে যোজনগন্ধার স্নায়ুযুদ্ধে প্রচলিত নিয়মনীতির তুলোধুনো যেন তস্য নতমস্তকে মেনে নেওয়াই ভরতবংশের ভবিতব্য।
যা নিজে পাননি তা কাশিরাজের কন্যা অম্বার আলিঙ্গনে ও বাঁধা পড়তে দেননি,আজন্ম দাসরূপে অপুত্রক থাকার অচিন্তনীয় সত্য আদায় করেছেন ভীষ্মের হতে।নদীর জল গড়ে মিশেছে অন্য মোহনায়,পট পরিবর্তনের পালায় প্রকান্ড পাহাড়ের ধাক্কায় ডুবেছে সত্যবতীর সাধ সংকল্প কিন্তু ধ্বংসস্তূপ থেকেই আগেরবারের চেয়ে বেশি ধ্বংসাত্মক হয়েছে তার প্রতিঘাত। ভেঙেছেন কিন্তু ভাঙ্গেননি গঙ্গাপুত্রকে দেওয়া তার শপথের শেকল।
দৃঢ়তা মিশ্রিত দুর্দমনীয় আশার আলো অন্ধকারের আবক্ষে আঁকার অকল্পনীয় শক্তি সত্যবতী আখ্যান যুগে যুগে শুধু বেদব্যাসের বাকে্য লম্বোদরের কলমে নয় বরং মহাভারতের মহাআখ্যানের সমাপ্তিবিহীন শব্দে সাজানো থাকবে অনাদিকাল ধরে।
Reviews
There are no reviews yet.