মৃত্তিকার যে খুব চাকরি করার ইচ্ছে ছিল, এমন নয়। সুমনা ওকে খুব বকত। যে মেয়ের অত ভালো রেজাল্ট, সে কিনা ঘরে বসে নিজের মেধাটাকে এভাবে নষ্ট করবে! কিন্তু মৃত্তিকার কোনোদিনই ইচ্ছে করত না সেভাবে কিছু করতে। ওই রোজ সকালে উঠে সেজেগুজে নাকেমুখে গুঁজে দৌড়তে হবে কাজে – এটা ভাবলেই ওর গায়ে জ্বর আসত। তার চেয়ে দুপুরবেলা নিজের পছন্দমত একটা বই নিয়ে ডুবে যাওয়া অনেক বেশি সুখের। সুমনার হাজার বকুনিও ওকে ওর জায়গা থেকে নড়াতে পারেনি। তবে ঐশিকের প্রস্তাবটা ওর খারাপ লাগেনি। সারাদিন ঘরে বসে থাকার চাইতে বাড়ির কাছাকাছি একটা ছোটখাটো কিছু করলে মন্দ হয় না। আর দুপুরের মধ্যে ফিরে এসে অনেকটা সময় নিজের জন্যেও পাবে ও – এই ভাবনা থেকেই বেশ খুশিমনে রাজি হয়েছিল মৃত্তিকা। তবে ঐশিকের জ্যেঠু এই ব্যাপারটা শুনে একটু ইতস্তত করেছিলেন,
‘আমাদের বাড়ির মেয়ে-বৌরা তো কোনোদিন চাকরি করেনি! ছোটবৌমার কি কিছু অসুবিধে হচ্ছে?’ – ঐশিককে জিজ্ঞেস করেছিলেন উনি।
ঐশিক তারপর কি বলে যে বাড়ির সকলকে বুঝিয়েছিল, সেটা সঠিক জানে না মৃত্তিকা। তবে ও দেখল শেষ পর্যন্ত ওর শ্বশুরবাড়ির সকলে বেশ খুশিমনেই সায় দিয়েছিলেন ওর স্কুলে জয়েন করার ব্যাপারটাতে। সকাল আটটা থেকে দশটা অবধি স্কুল। মৃত্তিকা সাড়ে সাতটায় বেরোয় বাড়ি থেকে, আবার পৌনে এগারোটার মধ্যে ফিরে আসে। ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর সঙ্গে কোথা দিয়ে যে সময়টা কেটে যায়, ও টেরও পায়না। ঐশিক কাজে বেরোয় সকাল ন’টা নাগাদ, আর ওর ফিরতে ফিরতে সেই রাত আটটা। ব্যবসাটা ভালোভাবে দাঁড় করানোর জন্য, আরও বড় করার জন্য খুব পরিশ্রম করছে ছেলেটা। মৃত্তিকার সারাদিন তাই একা একাই কাটে। এখন এই বাচ্চাগুলোর মাঝে গিয়ে মনে হয় ওরও যদি এমন একটা পুতুল থাকত! সারাদিন বেশ তাকে নিয়েই কেটে যেত সময়টা। ঐশিককে মিস করার সময়ই হয়ত পেত না ও!
বাচ্চাদের খুব ভালবাসে মৃত্তিকা। রোজ রোজ ওদের আদরে আদরে কেটে যায় ঘন্টাদুয়েক। তারপর বাড়ি ফিরে আবার পরেরদিনের অপেক্ষা। বাচ্চারাও খুব ভালবেসে ফেলেছে মৃত্তিকা দিদিমণিকে। ওর জন্য কখনো বাগানের ফুল, কখনো পেন আবার কখনো বা চুলের ক্লিপ – এরকম হরেক জিনিস নিয়ে আসে ক্ষুদেগুলো। মৃত্তিকা সব যত্ন করে তুলে রেখে দেয়। কবে যে এরকম সবসময়ের জন্য একটা পুতুল ওর হাতে আসবে, সেই ভাবনাটাই ভারি অস্থির করে তোলে ওকে আজকাল।
‘দু’টো মানুষ এক ছাদের তলায় থেকে অশান্তি ভোগ করার চেয়ে আলাদা থাকলে যদি শান্তি থাকে, সেটাই ভালো’।
‘তাহলে তোরা ডিভোর্স করছিস না কেন? তোর কি এমন বয়স? তুই কি সারাজীবন একা থাকবি নাকি? ওই মেয়েকে তুই নিজে দেখে বিয়ে করেছিলি, এবার আমরা দেখেশুনে তোর জন্যে একটা ঘরোয়া, লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে নিয়ে আসব, যাতে তোর জীবনে শান্তি থাকে। ওকে ডিভোর্সটা দিতে বল’ – বেশ রেগে গিয়েই কথাগুলো বলেছিলেন ঐশিকের জ্যেঠিমা।
আসলে তাঁর এই দেওরের ছেলেটিকে ছোট থেকে বুকে আগলে বড় করেছে তো, কখন যেন একটা অধিকারবোধ তৈরী হয়ে গেছে। ঐশিকের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ওর মা গিয়ে আগে জ্যেঠিমার সঙ্গে পরামর্শ করেন। কাজেই জ্যেঠিমা যে ছেলের জীবন নিয়ে চিন্তিত হবেন, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কিন্তু জ্যেঠিমার কথা শুনে আঁতকে উঠেছিলেন ঐশিকের মা,
‘তুমি কি বলছ দিদিভাই! ডিভোর্স আবার কি কথা! আমাদের বাড়িতে ওইসব কখনো কারোর হয়েছে নাকি! লোকে কি বলবে? আর বিয়ের মত একটা বন্ধন ঐ কাগজে সই করে কখনো ভাঙা যায়?’
‘তুই থাম তো বাবা। আগে কোনোদিন ডিভোর্স হয়নি বলে এখনও যে হবে না তার তো কোনো মানে নেই! আর লোকে কি বলবে সেটা না ভেবে তোর ছেলে কেমন থাকবে সেটা আগে ভাব তো দেখি! লোকের কথা পরে ভাবলেও চলবে। আমি চোখের সামনে ছেলেটাকে এমন শুকনো মুখে ঘুরতে দেখতে পারছি না, এই বলে দিলাম ব্যস!’ – একটু রেগে রেগেই কথাগুলো এবার বললেন জ্যেঠিমা।
ঐশিক এবার হাল ধরেছিল, ‘ও বম্মা, তুমি তো ভুলেই যাচ্ছ ঐক্যর কথা। ও তো আমার ছেলে নাকি বলোতো! ও আমার সঙ্গে থাকুক বা না থাকুক, আমার খবর তো পাবে! ও যদি কখনো শোনে ওর বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে, ওর আমার প্রতি কি ধারণাটা হবে বলো দেখি? রাগ কোরো না, সময়ের ওপর ছেড়ে দাও সবটা, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে’ – জ্যেঠিমাকে বুঝিয়ে বলেছিল ঐশিক।
ঐশিক নিজেও মনে মনে কোথাও একটা বিশ্বাস করত, একদিন হয়ত সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এভাবে যে আবার যোগাযোগ তৈরী হবে, সেটা বোধহয় ও কখনোই চায়নি। কাল সারারাত ঘুম হয়নি। মৃত্তিকা একটু ঘুমোনোর পর ওর মাথার কাছে চেয়ারে বসে নানারকম চিন্তা করতে করতে একটু চোখটা লেগে এসেছিল ঐশিকের। হঠাৎ চমক ভাঙল ঐক্যর ডাকে,
‘বাবা, সরি তোমাকে জাগাতে হল। আসলে তুমি বললে যে মাকে আজ আবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, তাই বলছিলাম মায়ের ওষুধপত্র বা অন্য কিছু জিনিস কি সঙ্গে দিয়ে দেব?’
‘শুধু ওষুধগুলো দিয়ে দাও, আর কিছু লাগবে না। আর তুমি যাবে না?’ – ঐক্যকে প্রশ্ন করে ঐশিক।
‘যদি লাগে আমি যেতে পারি, আর যদি বলো আমাকে কোনো দরকার নেই, তাহলে আর যাব না’ – বলে ঐক্য।
‘দরকার তেমন কিছু নেই, কিন্তু তুমি একা একা বাড়িতে থেকেই বা কি করবে?’
‘আসলে ঘরের কাজ অনেক জমে আছে। আমি তাহলে সেগুলো একটু সেরে রাখতাম…’
‘কেন? ওই রাতদিনের যে দিদি আছেন, উনি করে দেন না?’ – ভুরু কুঁচকে যায় ঐশিকের। ছেলেকে ঘরের কাজ করতে হচ্ছে শুনে হঠাৎ ভীষণ রাগ হয়ে যায় ওর। বেচারার ওপর এমনিই খুব মানসিক চাপ যাচ্ছে, তার ওপর এখন এইসব চাপ নিলে ও পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করবে কি করে!
‘না উনি তো মায়ের দেখাশোনা করেন, রান্নাবান্না করেন। ঘরের কাজ তো উনি করবেন না!’ – একটু ইতস্তত করে বলে ঐক্য। ওর গলায় কোনো অভিযোগ নেই।
ঐশিক আর কিছু বলেনা। মৃত্তিকার বাড়িতে সবকিছু দেখাশোনা করার জন্য ও-ই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল এই ভদ্রমহিলার। ছেলেটার ওপর যেন বেশি চাপ না পড়ে, সেই কারণেই এসব করা। কিন্তু ও যখন শুনল যে ঐক্যকে ঘরের কাজকর্ম করতে হয়, অজান্তেই বুকটা কেমন যেন চিনচিন করে ওঠে ওর। এমনিই ওর মায়ের সব কাজ ও অন্য কাউকে করতে দেয়না, ঐশিক জানে। ছেলে দূরে থাকলেও অপত্যের টান কি অস্বীকার করা যায়! ঐক্যর জন্মের পর ও ভেবেছিল ছেলেকে সবসময় আগলে রাখবে। কোনো দুঃখ-যন্ত্রণা যেন ওকে স্পর্শ করতে না পারে। কিন্তু ভাগ্যের এমনই ফের যে যন্ত্রণা আজ ছেলেটার নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে।
ঐশিকের ঈশ্বরে খুব যে বিশ্বাস আছে এমন নয়। আবার ও নাস্তিক, তেমন কথাও বলতে পারে না। বাড়িতে নানারকম পুজো ছোট থেকেই লেগে আছে, দেখেছে ও। সেখান থেকে মনে মনে ঈশ্বর আছে এমন একটা ভাব তৈরী হলেও ঈশ্বরের ওপর নির্ভর না করারই চেষ্টা করে ও। আজ মনে মনে অদৃশ্য কারোর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করে ও,
‘ছেলেটার খেয়াল তো আমি তেমন করে রাখতে পারছি না, তুমি ওকে দেখো!’
তোর কি মনে হয় যে ঐশিক ওদের বাড়ি দেখাবে বলে হঠাৎ এই মহাভোজ দিচ্ছে? আশ্চর্য তো! তুই এটা কেন বুঝছিস না মৃত্তিকা যে ও তোকে ওর বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। তাই বেচারা এত কষ্ট করে এই রাবণের গুষ্টির জন্য ব্যবস্থা করছে। এই তো কলেজে ঢোকার পর আমাকে বললি ঐশিক না বললেও তুই ওর মনের কথা বুঝে যাস। এখন তাহলে ঢং করছিস কেন?’ – বেশ ধমক দিয়েই ওকে কথাগুলো বলেছিল সুমনা।
নিতান্তই আর কোনো উপায় না দেখে একরকম বাধ্য হয়েই রাজি হয়েছিল মৃত্তিকা।
ওর সবচেয়ে ভালো দু’-চারটে জামার মধ্যে যে গোলাপী সালোয়ারটা ওর কাছে ভীষণ ‘পয়মন্ত’, সেটাই পরেছিল ও ঐশিকের বাড়ি যাওয়ার দিন। সব বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে মিষ্টি কিনল। খুব আনন্দ করছে সবাই। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর এভাবে সব বন্ধুরা মিলে হৈহৈ করে কারোর বাড়ি যাওয়া এই প্রথম। তার ওপর ঐশিকদের যৌথ পরিবার, বাড়িতে অতগুলো লোক – এই ভাবনাটাই মৃত্তিকাকে কেমন যেন অস্বস্তি দিচ্ছিল। বাকিদের সঙ্গে কিছুতেই স্বাভাবিকভাবে হৈচৈ-তে সামিল হয়ে পারছিল না ও।
‘কিরে মৃত্তিকা, প্রথমবারের জন্য শ্বশুরবাড়ি যাবি বলে নার্ভাস?’ – হঠাৎ মৃত্তিকার পাশে এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে অম্বরীশ।
‘হ্যাট, কি যে বলিস না তোরা! এই শোন, ওদের বাড়িতে গিয়ে তোরা যেন এইসব শ্বশুরবাড়ি-টশুরবাড়ি বলে ফেলিসনি। তোদের মুখে তো কোনো লাগাম নেই! বিচ্ছিরি কান্ড হবে তাহলে’ – বন্ধুদের সতর্ক করে মৃত্তিকা।
‘কেন? কি কান্ড হবে? আরে আমরা যদি না বলি, তাহলে তোর শ্বশুরবাড়ির লোক বুঝবে কি করে কোনটা তাঁদের বৌমা? তাঁরা যদি তোর বদলে সুমনা বা রাজশ্রীকে বৌমা ভেবে বসে, তোর ভালো লাগবে কি?’ – এবার ওদের কথার মাঝখানে এসে বলে রাকেশ।
‘এই তোরা এরকম অসভ্যতা করলে কিন্তু আমি যাবই না। এক্ষুনি ফেরার বাস ধরে বাড়ি ফিরে যাব, এই বলে দিলাম!’ – মৃত্তিকার মুখ দেখেই বাকিরা বোঝে যে এবার একটু বেশিই রাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ওকে। আর বেশি কিছু না বলে ‘আরে আমরা মজা করছিলাম, আয় তো তুই!’ – এই বলে ওর হাত ধরে ওরা দল বেঁধে এগোয় ঐশিকের বাড়ির দিকে।
এই আলোটাকে কি বলে জানিস?’ – পাশাপাশি অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর হঠাৎ প্রশ্ন করে ঐশিক।
‘হ্যাঁ জানি। কনে দেখা আলো। আমাকে কি তোর ট্যাঁশ মনে হয়? কনে দেখা আলো জানব না?’ – একটু ধমকেই বলে মৃত্তিকা।
আর মৃত্তিকার এই বলার ধরণে একটু ঘাবড়ে যায় ঐশিক, ‘না ঠিক তা না, আসলে আজকালকার দিনের মেয়েরা তো এসব বড় একটা জানে না, তাই ভাবলাম তুই জানবি কিনা…’
‘আমি আজকালকার মেয়ে, আর তুই কোন সাতকালের বুড়ো রে যে তুই সব জানবি? কনে দেখা আলোয় সব মেয়েকেই নাকি অন্যরকম সুন্দর লাগে, আমি শুনেছি। এই সময়টাকে গোধূলি বলে তো সেই জন্যে। দেখিস না গোধূলি লগ্নে বেশিরভাগ বিয়ে হয়! কারণ তাতে নাকি বৌকে দেখতে খুব সুন্দর লাগে। তারপর ছেলের বাড়ি থেকে দেখতেও আসে এইসময়ে। সত্যি, ভাবলে অবাক লাগে, আজকের দিনে দাঁড়িয়েও একটা মেয়ে যা-ই করুক, তাকে বিয়ের সময় সুন্দর দেখতে লাগাটা ভীষণ জরুরী!’ – ‘কনে দেখা আলো’-র ওপর ছোটখাটো একটা ভাষণ দিয়ে থামে মৃত্তিকা। আর তারপর ঐশিকের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘কি হল, ওরকম হাঁ করে কি দেখছিস?’
‘তোকে। কনে দেখা আলোয় আলাদা রকমের সুন্দর লাগে কেমন, সেটাই দেখার চেষ্টা করছি। যদিও আমার চোখে তো তুই সবসময়েই সুন্দর!’
‘ধ্যাত!’ – এবারে একটু লজ্জা পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয় মৃত্তিকা।
‘এই এই দাঁড়া দাঁড়া, এক মিনিট এদিকে তাকা’ – হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে উল্টোদিক থেকে মৃত্তিকার মুখটা নিজের দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করে ঋত্বিক।
‘কি হল টা কি! এরকম পাগলামো করছিস কেন বল তো? এখানে এত লোক আছে, সবাই দেখছে তো!’ – ছদ্মরাগ ফুটে ওঠে মৃত্তিকার স্বরে।
‘এইবার বুঝেছি!’ – মৃত্তিকার কথার তোয়াক্কা না করেই বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে ওঠে ঐশিকের মুখে।
‘কি বুঝলি?’
‘বুঝলাম যে কনে দেখা আলো-তে নয়, বরং লজ্জা পেলে আমার মৃত্তিকাকে অন্যরকম সুন্দর দেখতে লাগে!’
‘আমি তোর হলাম কবে?’
‘আজকে, এই মুহূর্ত থেকে!’
Weight 0.5 kg
Dimensions 21 × 18 × 2 cm
Author Name

Binding

Language

Publisher

Publishing Year

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “SRICHARANESHU MAA শ্রীচরণেষু মা || MOUMITA GHOSH”

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recently Viewed

  • Recently Viewed Products is a function which helps you keep track of your recent viewing history.
    Shop Now
SRICHARANESHU MAA শ্রীচরণেষু মা || MOUMITA GHOSH
Original price was: ₹240.Current price is: ₹192.

Only 4 left in stock

Estimated delivery on 6 - 11 July, 2024