ড. বিশ্বরূপ চক্রবর্তী
পথে ঘাটে আমরা মহাপুরুষদের মূর্তির সংখ্যা বাড়িয়েই চলেছি, কিন্তু তাতে চারপাশের মানুষের নৈতিক আধ্যাত্মিক কোনও উন্নতি হচ্ছে কি না বোঝা দুষ্কর। খবরের কাগজে দৈনিক এত দুঃসংবাদ থাকে, এবং এত সেই দুঃসংবাদের সঙ্গে মানুষকে লড়াই করতে হয় যে, মূর্তি ধারী মহাপুরুষেরা বোধ হয় সেগুলি অবিচলিত চিত্তে দাঁড়িয়ে দেখেন।
মহাপুরুষদের নিয়ে বই লেখা অবশ্য আর-এক বিষয়। এখানে মহাপুরুষেরা অত নৈর্ব্যক্তিক দূরত্বে থাকেন না, তাঁরা পাঠকদের কাছে নানা ভাবে সত্য ও অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠেন। এই ধরনের বই যাঁরা লেখেন তাঁরা এক হিসেবে সমাজের উপকার করেন, শুধু নিজের বিদ্যাচর্চার সাক্ষ্য হাজির করেন না। বিদ্যাচর্চা এমনিতেই এক মহৎ লক্ষ্য, কিন্তু যখন আমরা বিদ্যাসাগরের মতো কাউকে নিয়ে একটি বিশদ আলোচনার বই লিখতে দেখি তখন লেখকের বিদ্যানুরাগ ছাড়াও আর একটা বড় লক্ষ্য আমাদের কাছে অস্পষ্ট থাকে না। তা হল সে মহাপুরুষের চরিত্রমহাত্ম্য, কঠোর আত্মপীড়নকারী পরিশ্রম, গভীর করুণা এবং অদম্য জেদের আখ্যানও আমাদের কাছে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, এবং আমরা বুঝতে পারি যে, মানবচরিত্রে কোন্ কোন্ উপাদান থাকলে মানুষ আর সব মানুষের মাথা ছাড়িয়ে ওঠে, মহত্ত্বের পদবিতে উন্নীত হয়।
এই কারণে ড. বিশ্বরূপ চক্রবর্তীর বিদ্যাসাগর সংক্রান্ত সাম্প্রতিক ‘বিদ্যাসাগর : সমাজ ও সংস্কৃতি’ বইটিকে আমি স্বাগত জানাই। জন্মের দ্বিশতবর্ষ উত্তীর্ণ হয়েছে ওই মহাত্মার, কিন্তু এ বইটি শুধু উদ্যাপনের জন্য নয়। ড. চক্রবর্তী নিষ্ঠাবান গবেষকের মতো বিদ্যাসাগরের জীবন, কর্ম, ব্যক্তিত্ব সৃষ্টির নানা দিক নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। তাঁর ভাষা প্রাঞ্জল এবং নতুন সময়ের পাঠকদেরহৃদয়গ্রাহী হওয়ার গুণ তাতে আছে। আশা করি, বিষয়মাহাত্ম্যে ও বিবৃতিগুণে এ বই বাঙালি পাঠকের কাছে সমাদর পাবে।
Reviews
There are no reviews yet