‘আমিষ ও নিরামিষ আহার’ নামে ঐতিহাসিক যে-মহাগ্রন্থ প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর, তাঁর এই ‘জারক’ গ্রন্থটি চরিত্রে, বস্তুত, তারই সম্পূরক এক খণ্ড। কেননা, আহার্যের থালাটি নিরামিষ হোক বা আমিষ, আর সে-থালা যত ধরনের স্বাদু খাবারেই থাকুক না সজ্জিত, পরিপূর্ণ তৃপ্তির জন্য শেষপাতে চাই আচার কিংবা চাটনি, পান কিংবা মশলা। আচার-চাটনি বা পান-মশলা শুধু তৃপ্তিই জোগায় না, পরিপাককেও করে সুসাধ্য; বহুক্ষেত্রে, অরুচিকেও করে দূর। সেদিক থেকে এ-বই ‘আমিষ ও নিরামিষ আহার’-এরই অপরিহার্য অঙ্গ। প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী এখানে শিখিয়েছেন নানা ধরনের আচার, কাসুন্দি, জ্যাম, জেলি, মোরব্বা, আমসত্ত্ব, সস, সিরকা, স্কোয়াশ, শরবত, চুরন, হজমী, পাঁপড়, পাচন ইত্যাদি তৈরির সহজ কৌশল। পান-সাজা, মশলা ও ফল-সংরক্ষণ প্রভৃতি বিষয়েও দিয়েছেন বহু সুপরামর্শ। বৈচিত্র্যময়তায় এ-বই অনন্য ও স্বয়ম্প্রভ। এক কথায়, আচার-চাটনি ইত্যাদি বিষয়ে অসামান্য এক কোষগ্রন্থ।
প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী-র জন্ম ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে (আনুমানিক)। ঠাকুরপরিবারে জন্ম। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয়া কন্যা। বিবাহ হয়েছিল সুখ্যাত অসমিয়া সাহিত্যিক লক্ষ্মীনাথ বেজবড়ুয়ার সঙ্গে। রন্ধনবিদ্যায় উৎসাহী বাল্যবয়স থেকে। পিতা হেমেন্দ্রনাথের উৎসাহে-প্রেরণায়। হেমেন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন, লেখাপড়া গানবাজনা শিক্ষার পাশাপাশি রান্নাবান্নাতেও সুপটু হয়ে উঠুক সন্তানরা। এই উদ্দেশ্যে বাড়িতে সুদক্ষ পাচক নিযুক্ত করে রীতিমতো শিক্ষাদানেরও ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। প্রজ্ঞাসুন্দরীর জীবনের স্মরণীয়তম কীর্তি ছয় খণ্ডে রচিত ‘আমিষ ও নিরামিষ আহার’। আজ থেকে প্রায় এক শো বছর আগে যখন এ-বই লেখার পরিকল্পনা করেন তিনি, বাংলা ভাষায় তখন রন্ধনবিদ্যাশিক্ষার বই একেবারেই সুদুর্লভ। এ-বিষয়ে তিনিই অগ্রগণ্যা। বহু পলিতকেশ গৃহিণীর কাছে শোনা যায় যে, বিবাহপরবর্তী জীবনে তাঁদের অনন্য অবলম্বন ছিল উপহার বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই বইয়েরই একেকটি খণ্ড—যার সহায়তায় অতি সহজে ও তুমুল সাফল্যের সঙ্গে তাঁরা নতুন সংসারে গিয়ে হেঁশেলের হাল ধরেছেন। মৃত্যু ১৯৫০ সালে।
Reviews
There are no reviews yet.