কিছু কথা ছিল মনে
যারা ইতিহাসকে গল্প, কিসসা-কাহিনির মাধ্যমে পড়তে ভালোবাসেন, এই বই তাঁদের জন্য। উৎসর্গপত্রে আমি যে মাস্টারমশাইয়ের নাম লিখেছি, তিনি আমাদের গল্প করতে করতে ইতিহাস পড়াতেন। একদম ছোটবেলায় ধারণা ছিল, ইতিহাস অত্যন্ত নীরস বস্তু। কিন্তু নবকুমারবাবু যখন পড়াতেন, তখন মনে হতো সবকিছু চোখের সামনে ঘটে চলেছে। ওই তো মহামতি বুদ্ধ তথাগত হেঁটে চলেছেন। তিনি দুই বাহু প্রসারিত করে আশিস দিচ্ছেন সকলকে। সনাতন ধর্মের স্থবিরতাকে কাটিয়ে মহীরুহের মতো অপর একটি ধর্ম জন্ম নিচ্ছে। ঘটছে এক বিরল সংস্কার। ত্যাগ তিতিক্ষা দয়া মায়া করুণার আবহে সেজে উঠছে ভারতবর্ষ। আমার মতো অল্পবুদ্ধি বালকের চোখের সামনে সিনেমার রীলের মতো ছবি ফুটে উঠত তখন। শুনতাম মৌর্য বংশের গল্প, গুপ্ত বংশের কাহিনি। ইতিহাসবিমুখ ছেলেগুলোও গল্প শোনার লোভে ইতিহাসের পড়া মুখস্থ করে ফেলত।
ইতিহাস মানে কী? যেটুকু বুঝেছি তাতে ইতিহাস হল অতীতের রাজনৈতিক ধারাবিবরণ। সবসময়েই ইতিহাসের নিজস্ব রাজনীতি থেকেছে, রাজনীতির নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে। বিচারধারার ভেদাভেদে শক্তিমানের জয় চিরন্তন। যে ক্ষমতায় থেকেছে, সে সবসময় নিজের মতো করে ইতিহাসের গল্প বলেছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে দেখতে একটা সময় আম আদমির মনে বদ্ধ একটা ধারণা হয়ে গিয়েছে যে এটা বাদে আর কিছুই হতে পারে না, এটাই আসল ইতিহাস। আসলে আসল ইতিহাস বলে কিচ্ছু হয় না। ধরুন আমি বললাম, আরবরা সিন্ধু বিজয় করেছিল; আর আপনি লিখলেন, আরবরা সিন্ধু আক্রমণ করেছিল। দুটো একই ঘটনাকে বোঝাচ্ছে। তবুও বিস্তর ফারাক। একটাতে আরবদের সিন্ধুপ্রদেশ জয় করাকে গ্লোরিফাই করা হচ্ছে, আরেকটায় তাদের সিন্ধুপ্রদেশ আক্রমণকে ন্যক্কারজনক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। ব্যাখ্যাই আসল। ন্যারেটিভই ফারাক গড়ে দেয়। সত্য-অসত্যের ভেদকে কুয়াশাচ্ছন্ন করে দেয় ইতিহাসের গল্প। খালি, যে যখন বলে, সে তখন পাঠকের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে।
Reviews
There are no reviews yet.