তন্ত্র শব্দটির সঙ্গে যোগ, উপাসনা, আচার, বিধি-বিধানিক পদ্ধতি, ডাকিনী যোগিনীবিদ্যা, চিকিৎসা, রান্না জুড়ে আছে। শ্বাস নেওয়া তন্ত্রের আগম, শ্বাস ছাড়া নিগম। শরীরের পাঁচ চক্রের শক্তিই সক্রিয় হয় পঞ্চমুণ্ডিতে, নয়টি চক্র যখন জেগে ওঠে, নবমুণ্ডির আসনে বসে সাধনা করেন সাধক। কর্ম ও জ্ঞানের চর্চা করতে করতে শ্মশান চক্র; সহস্রারে পৌঁছনোর উদ্দেশেই শ্মশান সাধনা। হোরাতন্ত্র, শব্দতন্ত্র প্রাচীন তন্ত্রের উল্লেখ্য দিক। ভারত জুড়ে তিনটি তান্ত্রিক সম্প্রদায়ের রীতিপ্রথা, আচার আলাদা ধরনের। সাত্বততন্ত্রে যাঁদের সিদ্ধি আছে, তাঁরাই বশীকরণ সিদ্ধ। প্রয়োগ চিন্তামণি, কৌশিকীতন্ত্র, রোহিণীতন্ত্র, ষষ্ঠীতন্ত্র, বরাহসংহিতা; চিকিৎসা, জ্যোতিষ, ভৈষজ্য বিধানের পুথি। মোহিনীতন্ত্র, হেরজতন্ত্রে রয়েছে চক্র ও কায়ালিপি। তন্ত্র ও তন্ত্রান্তর সংহিতার মান্যতা শ্রীকুলে। শৈব দার্শনিক সম্প্রদায় তিনভাগে বিভক্ত। আগম- কামিকাগম শৈবাগম রুদ্রাগম ছুঁয়ে আঠারো আগমের বিদ্যাক্রম। সেখান থেকে চৌষট্টি ভৈরবাগম; ভৈরবতন্ত্র, যামালতন্ত্র, মততন্ত্র, মঙ্গলতন্ত্র, চক্রতন্ত্র, বহুরূপতন্ত্র, শিখাতন্ত্র, মালিনীবিজয়োত্তরতন্ত্র, পাশুপত মত, কাপালিক সম্প্রদায়। শিবাচার থেকেই তন্ত্র। তন্ত্র কখনওই ধর্ম নয়, আচরণ মাত্র। আচারক্রমের একটি ব্যবহারিক প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। সমস্ত ভাব, আচার ও সাধন পরম্পরা নিয়েই রচিত; তন্ত্রের ব্যবহারিক ইতিহাস আদি থেকে অন্ত।
সোমব্রত সরকার – প্রাকৃতজনের আচার – কৃষ্টি- সংস্কৃতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নীরবে কাজ করে যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেছেন। ভৈরবী, তান্ত্রিক, যোগিনী, কাপালিক, বাউল, বৈষ্ণব, সহজিয়া, অঘোরীদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা। কলকাতা, ঢাকা, ত্রিপুরা মিলিয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চল্লিশের ওপর। ভারত সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনে গবেষণা করেছেন তিনি। দুই বাংলা জুড়ে তাঁর লেখা বইগুলো বিদগ্ধ মহলে আলোচিত। চল্লিশ পঞ্চাশ- ষাট দশকের কবিদের সঙ্গেও ছিল তাঁর প্রবল যোগাযোগ। কলিকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র তাঁকে তরুণ প্রাবন্ধিক সম্মাননায় ভূষিত করেছেন।
Reviews
There are no reviews yet.