বিংশ শতকের প্রথম কয়েক দশক বাংলার অগ্নিযুগ। সেই সময়, যখন বঙ্গভঙ্গ অনুঘটক হয়ে দেখা দিয়েছে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের উন্মেষে, একাধিক বিপ্লবী সংগঠন যখন ব্রিটিশরাজের দমনপীড়নের প্রত্যুত্তর দিতে চাইছে সহিংস প্রত্যাঘাতে। সেই সময়, যখন বাংলায় বিপ্লবীদের স্বদেশব্রতে তীব্র আঘাত হানতে তত্কালীন ইংরেজ প্রশাসনের অন্যতম ভরকেন্দ্র লালবাজার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সেই সময়, যখন চার্লস টেগার্টের নেতৃত্বে কলকাতা পুলিশ সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে সশস্ত্র লড়াইয়ে বিশ্বাসী বঙ্গজ তরুণদের গ্রেফতারে-নির্যাতনে-শাস্তিদানে। সে এক অন্য লালবাজার, অচেনা লালবাজার।
এই বইয়ে অভিজ্ঞ আই পি এস অফিসার সুপ্রতিম সরকার কলকাতা পুলিশের মহাফেজখানার দলিল-দস্তাবেজ থেকে তুলে এনেছেন সেই অচেনা লালবাজারের কাহিনি। তুলে এনেছেন ইতিহাসের পাতায় উপেক্ষিত অনামী-অজানা-অচেনা তরুণ বিপ্লবীদের ভয়ডরহীন আত্মবলিদানের বীরগাথা।
অভিনব উপায়ে রডা কোম্পানির অস্ত্রলুঠ, বা বই-বোমার মাধ্যমে নির্দয় ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যার চক্রান্ত, বা সেনেট হলে বড়লাটকে গুলিবিদ্ধ করার অকুতোভয় চেষ্টা একুশের তরুণীর, বা বিশ্বাসঘাতক সতীর্থকে জেলের মধ্যেই হত্যা করে সহাস্যে ফাঁসিকাঠকে বরণ করে নেওয়া দুই নির্ভীক যুবকের। পাশাপাশি ঠাঁই পেয়েছে বিনয়-বাদল-দীনেশের ঐতিহাসিক রাইটার্স অভিযানের প্রামাণ্য দিনলিপিও।
এ বই মূলত তাঁদেরই উদযাপন, যাঁরা বিস্মৃত ‘কত প্রাণ হল বলিদান’-এর সমষ্টিতে, ‘ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান’-এর বহুবচনে। এ বই তাঁদেরই স্মৃতিতর্পণ, এক অন্য ভঙ্গিমায়। তথ্যের ভারে ক্লিষ্ট নয়, আবেগের আতিশয্যে আক্রান্ত নয়, স্বাদু গদ্য এবং টানটান লিখনশৈলীর মধ্যস্থতায় এ বই উত্তীর্ণ থ্রিলারধর্মী ইতিহাসযাপনের এক নতুন আঙ্গিকে।
– drluvu
Very accurate and vivid stories of independence